সাইফুর রহমান তুহিন
জুলাই ১৪, ২০২২, ০৬:১৪ পিএম
সাইফুর রহমান তুহিন
জুলাই ১৪, ২০২২, ০৬:১৪ পিএম
একটি শিশুর মস্তিষ্কের সুষ্ঠু বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পুষ্টি। শিশুর মস্তিষ্কের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে পূষ্টিকর খাবার। এই খাবার শিখতে, মুখস্থ করতে, মনোসংযোগের ক্ষমতা বাড়াতে এবং আচরণগত দিক ঠিক রাখতেও বিশেষ সহায়ক। এগুলো ছাড়াও পুষ্টিকর খাবার শিশুর তথ্য প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা, ইচ্ছাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এবং বহুমুখী কাজের দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা হচ্ছে মিনারেল, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমন্বয়, যা মস্তিষ্কের সঠিক পুষ্টির জোগান দেয় এবং মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে সুরক্ষা দেয়। এ কারণেই বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানের জন্য পরিপূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করা। যাতে তাদের সঠিক বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়। তাই খেয়াল রাখবেন, একটি পরিপূর্ণ মস্তিষ্কের জন্য আপনার সন্তান নিম্নোক্ত খাবারগুলো খাচ্ছে কি না।
ডিম: প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ ডিমের কিন্তু ক্ষমতা আছে শিশুদের মনোসংযোগ ও চিন্তাশক্তি বাড়ানোর। ডিমের কুসুম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যেমন- স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখা এবং যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ডিম শরীরে সেরেটোনিন হরমোনের গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে যা শিশুকে সারাদিন প্রাণচঞ্চল ও উজ্জীবিত রাখে।
মাছ: মাছে আছে বিপুল ওমেগা-থ্রি ফ্যাট, আয়োডিন ও জিংক। যা মস্তিষ্কের সক্ষমতার জন্য অত্যাবশ্যক। মাছ মস্তিষ্কের তরতাজা ভাব বৃদ্ধি করে এবং বয়সের কারণে মস্তিষ্কের ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, যারা মাছ খান তাদের মস্তিষ্কের পরিপক্কতা বেশি, যা মন-মেজাজের নমনীয়তা ঠিক রাখে। ফলে শিশুর মনের ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে। যেসব শিশু প্রতিসপ্তাহে মাছ খায়, তারা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটের কারণে বিষণ্নতায় ভোগে না। এ ছাড়া মাছ শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
রসালো ফলমূল: রসালো ফলে ‘অ্যান্টোচিয়ানিন্স’ নামক উপাদানের সমন্বয় আছে। যেগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এসব ফল মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এগুলো প্রদাহ প্রতিরোধক এবং নতুন নার্ভ সেল উৎপাদনে সহায়তা করে। রসালো ফল খাওয়া শিশুর বুদ্ধিভিত্তিক আচরণগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি একাডেমিক পারফরম্যান্স ভালো করে এবং শিশুর মস্তিষ্ককে সচেতন ও তীক্ষ্ম করে।
পাতাযুক্ত সবজি: শিশুর মস্তিষ্কের জন্য সবুজ শাক-সবজি অত্যাবশ্যক। স্পিনাচ ও লেটুসের মতো পাতাযুক্ত সবজিতে আছে ফ্লেভনডোইস, ভিটামিন ই ও কে-১। এ তিনটির সমন্বয় শিশুর মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেয়। যেসব শিশু পর্যাপ্ত পাতাযুক্ত সবজি খায়, তাদের বুদ্ধিভিত্তিক স্কোর বেশি হয়ে থাকে। এসব সবুজ শাক-সবজি যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের এবং অন্ত্রের প্রদাহ হ্রাস করে।
দই: প্রোটিনে ভরপুর টক দই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য এককথায় চমৎকার। দইয়ে আছে আয়োডিন, যা খুব সুন্দরভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে সহায়তা করে এবং শিশুর বুদ্ধিভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়াও দইয়ে আছে প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন বি-১২ ও সেলেনিয়াম যা মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। তাই ব্রেকফাস্টের জন্য শিশুকে ফল ও বাদামের পরিবর্তে টক দই দিন।
বাদাম ও বিচি: এতে আছে ভিটামিন ই, জিংক, ফলেট, লৌহ ও প্রোটিন। বাদাম এবং বিচিও শিশুদের একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং বুদ্ধিভিত্তিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। একটি শিশুর মস্তিষ্কের জ্বালানি এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও মেজাজের তারতম্য নিয়ন্ত্রণ করতে এ দুটি জিনিস সহায়তা করে। এ ছাড়াও এগুলো সেরোটনিন হরমোনের জোগান দেয়। ফলে শিশুরা মানসিক চাপমুক্ত ও হাসিখুশি থাকতে পারে। বিচিসমূহ কিন্তু ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ।
কমলা: কমলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা কি না স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কমলা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা আছে। যার মধ্যে আছে শিশুদের অধিকতর ভালো পারফরম্যান্স, মিশুক হওয়া, শক্তি সঞ্চয়, মনোসংযোগ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারা। বুদ্ধিভিত্তিক দক্ষতাও বৃদ্ধি করে কমলা।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া
লেখক: ফিচার লেখক।
আরইউ