আগস্ট ১০, ২০২২, ০৬:১৪ পিএম
কথায় আছে, মাছে-ভাতে বাঙালি। এই দুটো খাবার ছাড়া বেশিরভাগ বাঙালিই বেঁচে থাকা কঠিন! বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার প্রধান খাদ্য হলো ভাত।
ভাতের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, যার মধ্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতি, ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো, রক্তচাপ বজায় রাখা অন্যতম।
অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় এটি ভারত ও চীনে প্রধান খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয়। তবুও ভাত নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ভাত ওজন বাড়ায়।
অনেক বিজ্ঞানীদের মতে, ভাত খেলে নাকি উচ্চতা কমে যায় কিংবা খাটো হওয়ার পেছনে দায়ী থাকতে পারে ভাতও। আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের তুলনায় এশীয়রা উচ্চতায় খাটো হওয়ার কারণে এই ধারণাটি তৈরি হয়েছে। তবে বিষয়টির সত্যতা কী আর বিজ্ঞানই বা কী বলছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চতা বৃদ্ধি প্রধানত জেনেটিক্স, পুষ্টি ও শারীরিক কার্যকলাপ উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে জেনেটিক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপনি ঠিক কতটুকু উচ্চতার অধিকারী হবেন সে বিষয়ে।
এর পাশাপাশি উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে কিন্তু পুষ্টিরও পার্শ্ব ভূমিকা আছে। ভাত আমাদের নিয়মিত খাদ্যের একটি অংশ ও সীমার মধ্যে (১৮০-২৫০ গ্রাম) খাওয়া হলে, উচ্চতাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে না।
তবে পরোক্ষভাবে যখন কেউ অতিরিক্ত ভাত খায় তার ক্ষেত্রে এটি উচ্চতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভাত কীভাবে উচ্চতা বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে জেনে নিন ৪ কারণ-
১. ভাত একটি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য হওয়ায় আপনার শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রোটিন আমাদের শরীরের সিস্টেমের বিল্ডিং ব্লক হিসেবে বিবেচিত।
ভাত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কিন্তু প্রোটিনের পরিমাণ খুবই কম। তাই আপনার উচ্চতা পরিবর্তনে ভাতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে ভাতে থাকা খুবই কম প্রোটিন।
অত্যধিক ভাত খেলে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায় আর যেহেতু এতে কম প্রোটিন থাকে তা সামগ্রিক বৃদ্ধি ও উচ্চতাকে স্তব্ধ করে দিতে পারে।
তাই উচ্চতার কথা চিন্তা করে শিশু এমনকি বড়দেরও খাদ্যতালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুার। বিশেষজ্ঞরাও পরামর্শ দেন, ডায়েটে খুব বেশি ভাত বা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কোনো খাবার না রাখতে।
২. চাল আর্ম-স্প্যান উচ্চতার পার্থক্যকে প্রভাবিত করতে পারে বলে জানা যায়। আর্ম স্প্যান হলো ৯০ ডিগ্রি কোণে কাঁধের উচ্চতায় মাটির সমান্তরালে উন্নীত হলে একজন ব্যক্তির বাহুর এক প্রান্ত (আঙুলের ডগায় পরিমাপ করা হয়) থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পরিমাপ করা দৈর্ঘ্য।
এই আর্ম স্প্যানটি সরাসরি উচ্চতার সঙ্গে সম্পর্কিত। খুব বেশি ভাত খাওয়া পেপটিক আলসার ও পেটে অস্বস্তির তৈরি করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত জিইআরডিতে পরিণত হয়।
বিভিন্ন ধরণের গবেষণা নিশ্চিত করে যে, আর্ম-স্প্যান উচ্চতার পার্থক্য দ্বারা মূল্যায়ন করা মেরুদণ্ডের বিকৃতি জিইআরডি লক্ষণগুরোর প্যাথোজেনেসিসের সঙ্গে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সম্পর্ক জটিল হলেও ভাত এভাবে উচ্চতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
৩. ভাত খেলে অলসতা বাড়ে, যা উচ্চতা কমিয়ে দিতে পারে। ভাত খাওয়ার পরপরই একজন মানুষ ক্লান্ত ও অলস বোধ করে। এ কারণেই এশিয়ানরা সাধারণত রাতের খাবারে ভাত খান, যাতে রাতে ভালো ঘুম হয়। আবার অতিরিক্ত ভাত খেলে ওজনও বেড়ে যায়।
জেনেটিক্স ও পুষ্টি ছাড়াও, শারীরিক ব্যায়ামও উচ্চতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অত্যধিক ভাত খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে চরম ক্লান্তি ও অলসতা তৈরি হতে পারে। ফলে শারীরিক ব্যায়াম করতে খুব ক্লান্ত বোধ তৈরি হয়। যা পরোক্ষভাবে হলেও উচ্চতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
৪. টাইপ ১ ডায়াবেটিস হলো অতিরিক্ত ভাত খাওয়ার একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুরা দুর্বল গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণের কারণে শারীরিকভাবে কম বিকশিত হয়।
যদিও এটি সরাসরি উচ্চতা কমা বা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তবে এটি একটি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশকে কিছুটা প্রভাবিত করতে পারে।
এসব কারণে পরোক্ষভাবে হলেও ভাত খাটো করে তুলতে পারে। সামগ্রিক ভাত সরাসরি কখনই আপনার উচ্চতাকে প্রভাবিত করতে পারে না।
তবে অতিরিক্ত ভাত খাওয়া পরোক্ষভাবে আপনার সামগ্রিক বৃদ্ধি ও বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে অদূর ভবিষ্যতে কার ঠিক কতটা উচ্চতা হবে তা নির্ধারণ করতে জেনেটিক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সূত্র: হেলথ অ্যান্ড হেলদিয়ার