আগস্ট ২১, ২০২২, ০৫:৪১ পিএম
বেশিরভাগ মানুষই মুখের স্বাস্থ্য বলতে বুঝেন শুধু দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি। শুধু দাঁতের নানা সমস্যা নয় একজনের নিঃশ্বাসের গন্ধ থেকে শুরু করে, জিহ্বার রং বদলে যাওয়া কিংবা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি সমস্যা শারীরিক নানা রোগের ইঙ্গিত দেয়।
মুখের এসব সংকেতগুলোর মাধ্যমে যত দ্রুত রোগ শনাক্ত করবেন ততই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন আপনিও। জেনে নিন মুখের কোন কোন সমস্যা কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়-
মাড়ি থেকে রক্তপাত
ব্রাশ করার সময় যদি আপনার মাড়ি ফ্যাকাশে হয়ে যায় বা রক্তপাত হয় তবে এটি মাড়ির রোগের লক্ষণ হতে পারে, যা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মাড়ির রোগে আক্রান্ত রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা দুই থেকে তিন গুণ বেশি। এটি প্রদাহের কারণে হতে পারে যা শক্ত ধমনী হতে পারে ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অন্যদিকে মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়াও ভিটামিনের অভাবের লক্ষণ হতে পারে। একটি মাল্টিভিটামিন ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণের মাধ্যমে মাড়ির এই সমস্যা সারানো যেতে পারে।
সাদা জিহ্বা
আপনার জিহ্বায় হালকা সাদা আবরণ থাকা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো এই আবরণ কিন্তু জিহ্বার সংক্রমণ বা ক্যানসারের মতো আরও গুরুতর রোগের লক্ষণও হতে পারে।
জিহ্বায় অস্বাভাবিক সাদা ক্যানসারের কারণও হতে পারে। আবার সাদা জিহ্বার আরেকটি কারণ হতে পারে ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস। যা ওরাল থ্রাশ ও জিওগ্রাফিক জিহ্বা নামে পরিচিত।
এসটিআই সিফিলিসের লক্ষণও হতে পারে যা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। যদি সিফিলিসের চিকিত্সা না করা হয় তাহলে এটি বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
মুখের আলসার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখের ঘা কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে তা নির্ভর করে আসলে কী কারণে ঘা হয়েছে। কিছু হালকা সমস্যার মধ্যে আছে মুখের ভেতরে কামড় লাগা, দুর্বল-ফিটিং ডেনচার, সোডিয়াম লরিল সালফেটযুক্ত টুথপেস্ট কিংবা খাদ্য সংবেদনশীলতা।
আবার মুখের আলসার হরমোনের পরিবর্তন, বি ভিটামিন, জিংক ও আয়রনের ঘাটতির লক্ষণও হতে পারে। যা হাত, পা ও মুখের রোগ, ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস, ক্রোহনস ডিজিজ ও সিলিয়াক ডিজিজ, এইচআইভি বা লুপাসের মতো রোগ হওয়ায় দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণেও হতে পারে।
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
মুখের দুর্গন্ধ সাধারণভাবে নেওয়া কখনোই উচিত নয়। এটি মাড়ির রোগের লক্ষণ হতে পারে। আবার নাক, সাইনাস বা গলায় প্রদাহের কারণেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে।
এমনকি কিছু ক্যানসার ও বিপাকীয় ব্যাধির মতো অবস্থার কারণেও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতে পারে। পেটের অ্যাসিড রিফ্লাক্সও দুর্গন্ধের সঙ্গে যুক্ত।
ঠোঁটের কোণে ফাটল
মুখের আরেকটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলো ঠোঁটের কোণে ফাটল, যা আয়রন, জিঙ্ক বা বি ভিটামিনের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। এই ফাটলগুলো ইঙ্গিত করতে পারে যে আপনার পাচনতন্ত্রে কোনো সমস্যা আছে।
প্রদাহজনিত হজমজনিত ব্যাধিযুক্ত ব্যক্তিরা সিলিয়াক ডিজিজ, ক্রোনস বা আলসারেটিভ কোলাইটিসের কারণে ঠোঁটের কোণে ফাটল দেখা দিতে পারে। ভিটামিন গ্রহণ বাড়ানোর মাধ্যমে এই সমস্যা সারানো যায়।
মুখের ক্যানসারের লক্ষণ
মুখের যে কোনো অংশে যেমন- ঠোঁট, মাড়ি, জিহ্বা, গালের ভেতরের আস্তরণে ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মুখের ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে আলগা দাঁত, ঠোঁট বা মুখের ঘা যা নিরাময় হয় না, মুখের ভেতরে সাদা বা লালচে ছোপ, কোনো পিণ্ড, মুখের ব্যথা কিংবা গিলতে অসুবিধা বা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদি এসব উপসর্গগুলোর মধ্যে যে কোনোটি কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তবে অবশ্যই তা পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকেই এসব লক্ষণকে সাধারণভাবে নেন, যা পরবর্তীতে গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
আমারসংবাদ/আরইউ