মাজহারুল ইসলাম শামীম
আগস্ট ২১, ২০২২, ০৬:৫৫ পিএম
মাজহারুল ইসলাম শামীম
আগস্ট ২১, ২০২২, ০৬:৫৫ পিএম
হাজারিখিল অভয়ারণ্য সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের হাজারিখিল বন্য প্রাণীর এক অভয়ারণ্য।
জানলে অবাক হবেন, চট্টগ্রাম এমনকি ফটিকছড়ির মানুষরাও এখনো ঠিকমতো চেনেন না এই অভয়ারণ্য। তবে সেখানে গেলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। সেখানে গেলে রোমাঞ্চকর অনুভূতি পাবেন পর্যটকরা। একদম শান্ত ও নিরিবিলি জায়গা এটি!
সীতাকুণ্ড শহরের একেবারেই নিকটে অবস্থিত হাজারিখিল। ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল ২ হাজার ৯০৮ হেক্টরের এই স্থানকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে স্থানটি ‘হাজারিখিল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সেখানে জনসমাগম অনেকটাই কম।
শান্ত, নিরিবিলি, পরিষ্কার পরিচ্ছন একটা পরিবেশের মধ্যে বনে ক্যাম্পিং করতে যারা চান তাদের জন্য সেরা এক জায়গা হলো এই হাজারিখিল অভয়ারণ্য। ইউএসএআইডি ও বন বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয় এই বন! ক্যাম্পিংয়ের জন্যে যা যা লাগে সবকিছু সেখানেই পাবেন।
আপনি যদি ক্যাম্পিংয়ের পাশাপাশি ঘুরতেও চান সেক্ষেত্রে ঘুরার জন্য বন-জঙ্গল ও চা বাগান আছে! ৭-৮ কিলোমিটারের ভয়ংকর এই হাজারিখিল ট্রেইল! ট্রেইলটা শেষ হয় ‘কালাপানি’ ঝরনাতে। অসাধারণ এই হাজারিখিল ট্রেইল।
হাজারিখিল ট্রেইলে ঢুকলে আপনি ঝিরিপথ, ক্যাসকেডর মধ্য দিয়ে আবেগী হয়ে সামনে হাঁটতেই থাকবেন খালি। ঝিরিপথ, ক্যাসকেডের একেকটি মোড় পার হয়ে যতই সামনে এগিয়ে যাবেন ততই অবাক হবেন কারণ পুরো ট্রেইলটাই অসাধারণ সুন্দর।
হাজারিখিল অভয়ারণ্যে প্রায় ২৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি, প্রায় ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৮ প্রজাতির উভচর আছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে। যেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ বা প্রাণী হিসিবে চিহ্নিত করে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর মধ্যে আছে হিমালিয়ান সেরু ও ঢেলু। এদেরকে বন ছাগল ও বন কুকুর বলা হয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে আছে মায়া হরিণ, মুখপোড়ো হনুমান, কাঁকড়াভুক বেজি, মেছোবাঘ, বড় অজগর ইত্যাদি।
পাখিদের মধ্যে আছে বিপন্নপ্রায় কাঠময়ূর ও মথুরা। এরা গভীর বনে থাকতে পছন্দ করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে কাঠময়ূর জোড়ায় জোড়ায় চলাচল করতে পছন্দ করে। এরা খুব লাজুক প্রকৃতির পাখি। তাই এদের দেখা পাওয়াই ভার। এরা মাটি সরিয়ে কাঠি দিয়ে বাসা বানায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এক গবেষণায় এই অরণ্যে এমন কিছু পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে, যা অন্য কোনো বনে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। সেই তালিকায় আছে হুদহুদ, নীলকান্ত, বেঘবৌ, আবাবিলসহ আরও অনেক আকার-আকৃতি, বর্ণ ও স্বভাবের বৈচিত্র্যময় পাখি।
মস্ত বড় ঠোঁট ও শিরস্ত্রাণের জন্য বিখ্যাত পাখি কাউ ধনেশও আছে। সেটিও বিপন্নপ্রায় পাখিদের মধ্যে একটি। হয়তো দেখা পেওয়া যেতে পারে পানির কাছাকাছি কোনো বড় অন্ধকার গাছে ডালপালার মধ্যে আত্মগোপন করা হুতুম পেঁচারও। আরও উল্লেখযোগ্য পাখির তালিকায় আছে হট্টিটি, বেশরা, ওয়াক, আলতাপরী, লেজ নাচনি, বাদামি কসাই, সাত ভায়লা, ম্যাকারিন, ইত্যাদি।
এছাড়া বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দল এসে এই অরণ্যকে করে তোলে পাখিদের স্বর্গরাজ্য।
উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের তালিকায় আছে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, গামারি, ছাতিয়ান, চুন্দুল, গুটগুটিয়া ইত্যাদি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বিরল প্রজাতির বৃক্ষ বৈলামও আছে সেখানে। যার উচ্চতা প্রায় ১০০ মিটার। যা হাজারিখিল ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও প্রায় নেই বললেই চলে। এছাড়া সেখানে আছে বিখ্যাত রাঙাপানি চা বাগান, চা তৈরির কারখানা, রাবার বাগান, পাহাড়, অরণ্য, ঝরনা, ট্রেইলসহ আরও অনেক কিছু।
হাজারিখিল অভয়ারণ্যে ভ্রমণের জন্য আমরা প্রথমে ফেনীর মহীপাল নামক স্থান থেকে বাসে উঠলাম। এরপর আমরা ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই নেমে যায় বাস থেকে।
এরপর আমরা বেশ কিছু গাড়ি পরিবর্তন করে অবশেষে অনেক পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করে পৌঁছায় আমাদের গন্তব্য স্থান হাজারিখিল অভয়ারণ্যে। সেখানে পৌঁছেই টিকিট কেটে আমরা প্রবেশ করলাম হাজারিখিল বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যে।
অনেক দূর থেকে ঝরনার পানির শব্দ শুনতে পাবেন। কাছে মনে হলেও এটি বনের অনেক গভীরে। যা সবার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। যাদের হাতে সময় কম থাকে তারা কখনো এই ঝরনায় যাওয়া উচিত নয়।
কারণ ঝরনার পথ খুবই বিপজ্জনক ও দূর্গম। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছিলাম অনেক দূর হেঁটে ঝিরি পথ ধরে। তবে সময় কম হওয়াতে ঝরনার দূরত্ব বেশি হওয়াতে যাওয়া হয়নি।
ঝরনার পথে এগিয়ে যেতেই প্রথমে চোখে পড়বে বিশাল চা বাগান। আরও দেখতে পাবেন গাছের মধ্যে বেঁধে রাখা বিভিন্ন ঝুলন্ত কাঠের দোলনা। আছে বিভিন্ন প্রজাতির উঁচু গাছ। উপজাতিদেরও দেখা পাবেন। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে আমাদের সময় প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এলো। বিকেল ৪টা নাগাদ আমরা ফেরার পথ ধরলা।
লেখক: ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ
আমারসংবাদ/আরইউ