Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মোসলেম আলীর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী

আমার সংবাদ ডেস্ক

আমার সংবাদ ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম


জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মোসলেম আলীর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী

কিছু তারিখ ঐতিহাসিক। কিছু তারিখ নিজেই ইতিহাস। কিছু মানুষের কর্মকাণ্ড মনে রাখার মত আবাবার কিছু মানুষ নিজ কাজের মাঝে অমর হয়ে আছেন। তেমনি একজন মানুষ অধ্যাপক মোসলেম আলী ৭ ফ্রেব্রুয়ারি দিবসটির তেমন কোন তাৎপর্য না থাকলেও আমাদের কাছে স্মরনীয় একটি দিন। কারণ এদিন কিংবদন্তি শিক্ষক ও শিক্ষা ক্যাডারের অহংকার, প্রফেসর মোসলেম আলী নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার জোড় মল্লিকা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএস সি ও রসায়ন বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

১৯৬৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা সার্ভিস কমিশন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে রাজশাহী কলেজে রসায়ন শাস্ত্রে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৬৭ সালে সিলেট এমসি কলেজে যোগদান করেন এবং ঐ বৎসরই বদলী জনিত কারণে পুনরায় রাজশাহী কলেজে ফিরে আসেন।

১৯৭২ সালে তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজে যোগদান করেন এবং তার নেতৃত্বে সেখানে রসায়নশাস্ত্রে সম্মান কোর্স চালু হয়। এরপর ১৯৭৫ সালে তিনি নওগাঁ ডিগ্রি কলেজে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন লাভ করে সেখানে যোগদান করেন। সেকালের নওগাঁ কলেজে তার প্রভাময় ব্যক্তিত্বের আলো ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৭ সালে তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে খুলনা বিএল কলেজে যোগদান করেন। এরপর ১৯৮১ সালে তিনি রাজশাহী কলেজের রসায়ন শাস্ত্রের বিভাগীয় প্রধানের পদে যোগদান করেন।

পরর্বীতে তিনি নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি নাটোর এনএস কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নিউ গভ: ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তাঁর কর্মদক্ষতা নিউ গভ: ডিগ্রি কলেজে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পেলে কলেজটি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজের মর্যাদা লাভ করে এবং তিনিও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৮৯ সালে তিনি সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ পাবনায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কর্মকালে কলেজটিতে নানা গৌরবময় ঐতিহ্য সৃষ্টিতে সফলতা অর্জন করে। তাঁর এই সাফল্যের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৯২ সালের সূচনালগ্নে তিনি তৎকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ঐ পদে কর্মকালে তাঁর ইতিবাচক ভাবমূর্তি ও খ্যাতি সর্বজনবিদিত।

এমতাবস্থায়, তিনি জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক পদে যোগদান করেন এবং তিনি তাঁর কর্মময় জীবনে অসামান্য প্রতিভা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে সক্ষম হন। অবসর গ্রহণের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা পদে যোগদান করেন। সে সময় তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের "ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কালচারাল একাডেমি‍‍` নামক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে সুনাম ও মর্যাদার সাথে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সেখানে দ্বায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ইরান, সুইজারল্যান্ড, মালেয়েশিয়া, ভারত, সিংগাপুর, ভিয়েতনাম সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ইংরেজী ভাষায় দক্ষ একজন বক্তা। তৎপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত কৃষিভিত্তিক শিল্পের সংগঠন বাপা এর উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন কালে শেষ জীবনেও আপন মেধা ও প্রজ্ঞার অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করতে সক্ষম হন। সেখানেও তিনি সাফল্যের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রকল্পের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দেন। অধ্যাপক মো. মোসলেম আলী ১৬ এপ্রিল ২০২১ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর চারদিন পর স্ত্রী মিসেস শরীফা আলীও ২০ এপ্রিল ২০২১ তারিখে সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে পরকালে গমন করেন।

তারা দুজনে পাশাপাশ রাজশাহী গোরহাঙ্গা কবরস্থানে শায়িত আছেন। আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেলেও অধ্যাপক মোসলেম আলী তাঁর কাজের মাঝে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।

ইএইচ

Link copied!