সীমান্তে গুলিতে নিহত সবাই অপরাধী: বিএসএফ ডিজি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২২, ০৩:২৩ পিএম
সীমান্তে গুলিতে নিহত সবাই অপরাধী: বিএসএফ ডিজি

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশিরা সবাই অপরাধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পঙ্কজ কুমার সিং। তার দাবি, নিহতদের সবাই মাদক কারবারি, চোরাকারবারি। আর প্রত্যেকটা গুলির ঘটনাই রাতে ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুরে পিলখানাস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বিএসএফ মহাপরিচালক।

‘সীমান্তে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের কিসের ভিত্তিতে অপরাধী বলছেন। তাদের শরীরের ওপরের অংশে গুলি লাগার পরও কেন এটা টার্গেটেড কিলিং নয়?’ এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘জুডিশিয়াল সিস্টেমে কোনো অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা কাউকে অপরাধী বলতে পারি না। 

আমরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলি, কলকাতা পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করি । দুই দেশের সীমান্তে চোরাকারবারে জড়িত মাফিয়ারা।’

দুই দেশের সীমান্তবর্তী দুই এলাকাতেই ভালোমন্দ মানুষ আছেন উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, তাদের কারণে সীমান্তে অপরাধ সংঘঠিত হয়। তাদের কারণেই চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, গরু পাচার, শিশু ও নারী পাচারসহ এ কাজে জড়িত অপরাধীরা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেন।

বিএসএফ মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘প্রথমে আমরা নন লেথাল অস্ত্র ব্যবহার করি। যাতে প্রতিরোধে মরণঘাতী না হয়। ৮৯ বিএসএফ সদস্য সীমান্তে অপরাধীদের হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছেন।’ 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যৌথভাবে সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ দমন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনতে কাজ করছি।’

প্রতিবার সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধে আলোচনা হয়। কিন্তু সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। গত জুন মাসে সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছেন পাঁচজন। এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘এ প্রশ্ন প্রতিবছরই শুনতে হয়। বিজিবি ও বিএসএফ খুবই পেশাদার বাহিনী। 

তবে আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়েও আলাদা। আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে থাকি, কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায়।’

এর আগে, সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

সেই সঙ্গে এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং এসব অপরাধ দমনে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন।

অপরদিকে, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভেয়ার জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরাসহ ২০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন।

 

আমারসংবাদ/টিএইচ