একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন আজ সমাপ্ত হয়েছে।
অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ এ অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাপনী ভাষণ দেন। এছাড়া বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের সমাপনী দিনে বক্তৃতা দেন।
অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেয়ার আগে ১৯৭২ সালের মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষনের অডিও সংসদে শোনানো হয়।
গত ২৮ আগস্ট শুরু হয়ে আজ শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত এ অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৫টি। এ অধিবেশনে আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে ৩৭টি নোটিশ পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ৩৭টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনি ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ৯৮৬টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীগণ ৩৬৯টি প্রশ্নের জবাব দেন। এ অধিবেশনে ৩টি বিল পাস হয়।
এছাড়া এ অধিবেশনে সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি ১৪৭ বিধিতে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিদ্যমান সংকট এবং সরকারের পদক্ষেপ এবং ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়কদের চিহ্নিত করাসহ বর্তমান সময়ে নতুন সব চক্রান্ত প্রতিহত করার প্রত্যয় শীর্ষক দু`টি পৃথক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রস্তাব দু`টি আনেন যথাক্রমে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক এবং সরকারি দলের র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
স্পিকার বলেন, ‘আপনারা জানেন এ অধিবেশন ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ অধিবেশনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকারের নির্বাচন ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তিনি নবনির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার মো: শামসুল হক টুকু এমপিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
এ অধিবেশনে (সাধারণ) বিধি ১৪৭ এর আওতায় আলোচিত দুইটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে - “কোভিড-১৯, বৈশ্বিক অস্থিরতা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জ্বালানী সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রভৃতি সমস্যা মোকাবেলা করার নিমিত্ত সরকারের গৃহীত স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই পদক্ষেপসমূহ মহান সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতিকে অবহিত করা হউক।” এবং “যে ঘৃণ্য খুনীচক্র ও চক্রান্তকারী গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদেরকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি। কিন্তু চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনো ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিতে। তাদের এই ঘৃণ্য চক্রান্তকে সফল হতে দেয়া যায় না। ইতিহাসের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা, বাঙালীর মহত্তম ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদকে বিনম্র চিত্তে ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি এবং বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেয়ার শপথ গ্রহণ করছি। ২০২২ এর আগস্ট মাসে একাদশ জাতীয় সংসদের উনবিংশতম অধিবেশনে এই হোক দৃঢ় প্রত্যয়।”
সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদানের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এ জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি সার্বক্ষণিক সংসদ পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তিনি সংসদ উপনেতা, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, চিফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ এবং সকল সংসদ-সদস্যগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ও বিরোধীদলীয় উপনেতার প্রতি সংসদ কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিন তার সহকর্মী নবনির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্যবৃন্দকে তাঁদের সহযোগিতা ও পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
পাশাপাশি তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দকে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যম, গণমাধ্যমের কর্মীবৃন্দসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। “দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়।” তাই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, `আসুন জনগণের প্রতিনিধিরূপে আমরা সংসদ সদস্যবৃন্দ সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করে তুলি। বিশ্বায়নের এই যুগে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যে নিত্য নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে, আসুন সেগুলো উত্তরণে একত্রে কাজ করি। আমাদের সংবিধানের অঙ্গীকার পূরণে, রাজনীতির ধারাকে সুসংহত করি।`
ইএফ