নির্বাচনটা পিকনিকের মতো। একেকজন একেক কথা বলবেন। তারপর সিদ্ধান্ত হবে। ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।
সোমবার (১০ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। গত শনিবার (৮ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে ইসির বৈঠকের আলোচনা ও হইচইয়ের বিষয়ে এ ইসিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মো. আলমগীর বলেন, আপনি একটা পিকনিকে যাবেন। পিকনিকে গেলে কেউ বলবেন বিরিয়ানি খাবো, কেউ বলবেন পোলাও খাবো। কেউ বলবেন যে রোস্ট করলে ভালো হয়, কেউ বলবেন ওটা করলে ভালো হয়। তারপরে একটা ডিসিশন হলে তো পিকনিকে যান? আনন্দ, ফুর্তি করেন? এটাও (নির্বাচন) ঠিক ওই রকম। তাই না? এটাও একটা টিম বিল্ডিংয়ের কাজের মতো। এখানে নানাজনের নানা মত থাকবে। একজনে বলবেন এটা করলে ভালো হয়, আরেকজন বলবেন ওটা করলে ভালো হয়। তারপরে সবার কথা শুনে সিদ্ধান্ত হবে। সেই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিতে বাধ্য হবে।
কিছু কিছু সমস্যা থাকবে। নদী, পাহাড়, পর্বত তো উঠিয়ে দিতে পারবেন না। কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। নদী বা চর এলাকায় জ্বালানি খরচ বাড়াতে বলেছেন তারা, সেটাতে আমরা একমত হয়েছি। এটা কমিশনে নথি আসলেই অনুমোদন দিয়ে দেব। এছাড়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের অধিক প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন। এখন অনেক কর্মকর্তা আছে যারা অদক্ষ বা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন। তাদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দিতে বলেছি। অন্যদিকে তারা বলেছেন, ৪৪ হাজার ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ফোর্স নেই। তাই ভোটকেন্দ্র কমানোর জন্য বলা হয়েছে। আমরা বলেছি আপনারা নিরপেক্ষ থাকলে এমনিতেই উত্তেজনা কমে যাবে।
সাবেক ইসি সচিব আরও বলেন, কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে নির্বাচন কর্মকর্তা আইনের অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে সময় পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে রিটার্নিং অফিসারে কাছে। আর যে যত বড় অফিসার হন, কেন্দ্রে সুপ্রিম ক্ষমতা হলো প্রিজাইডিং কর্মকর্তার হাতে। তাই তার কথা শুনতে হবে সবাইকে। কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ম্যাজিস্ট্রেটের কথা শুনতে হবে। আর ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের অফিসারের কথা শুনবেন।
অনেক ডিসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে বাছাই করবেন কিনা প্রশ্ন করলে ইসি আলমগীর বলেন, এগুলোর তো কোনো মেশিন নেই। এগুলো পারসেপশন। তবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়ে দেব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাদের গোয়েন্দা সংস্থা না থাকলেও লোকবল আছে। আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আছে। কাজেই এটা মনে করে করার কোনো কারণ নেই, একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে কেউ জানাবে না। কেউ না কেউ আমাদের জানিয়ে দেবে। এমন অভিযোগ থাকলে আমরা তাকে বাদ দেব। শুধু বাদ নয়, নির্বাচনের কোনো পর্যায়ে গিয়ে অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইনে ব্যবস্থা নেব।
ডিসি-এসপিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে এ কমিশনার বলেন, এটা স্যাটেল জিনিস। শেষ হয়ে গেছে। আমাদের সফল আলোচনা শেষ হয়েছে। আমাদের আলোচনা তারা মন দিয়ে শুনেছেন। উনারা যে সমস্ত সমস্যার কথা বলেছেন। আমরাও বলেছি এগুলো আমরা আমাদের সীমিত সক্ষমতার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এটা আমাদের টিম ওয়ার্ক। টিমের নানা রকম সদস্যরা থাকেন। দ্বিমত থাকে। তারপর বিতর্ক হয়। আলোচনা হয়। সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সবাই প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বে আছি। এখানে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এখানে সবাই আমরা দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। যিনি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হবেন তাকে বাদ দেওয়া হবে, সেটা আমি হই যেই হোক। কারণ, প্রতিষ্ঠান তো থাকবে। লোক চেঞ্জ হতে পারে; প্রতিষ্ঠান তো চেঞ্জ হবে না। কমিশনে আমি যদি আমার রোল প্লে না করতে পারি আমিতো থাকবো না। আমার পরিবর্তে আরেকজন আসবে।
ইএফ