নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন চাওয়া ৯৩টি দলের মধ্যে ১৪টির আবেদন বাতিলের সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাছাই কমিটি।
এছাড়া, দুটি দল নিজেরা আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বর্তমানে ৭৭টি দল নিবন্ধন প্রত্যাশী হিসেবে টিকে রইল। এই ৭৭টি দলেরও কাগজপত্র ঠিক না থাকায় ১৫ দিন সময় দিতে সুপারিশ করেছে বাছাই কমিটি। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ইসিতে নিবন্ধন চাওয়া নতুন দলগুলোর মধ্যে চালানের টাকা ও সঠিকভাবে নিবন্ধনের আবেদন ফরম পূরণ না করায় ১৪টি দলের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ৭৭টি দলের যেসব তথ্য প্রয়োজন সেবগুলো দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া এবং দুটি দল নিজেরাই তাদের আবেদন প্রত্যাহার চেয়েছেন বলে বাছাই কমিটি নথিতে উল্লেখ করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা কোনো দলই সঠিকভাবে আবেদন করতে পারেনি। এদের মধ্যে ১৪টি দল চালান এবং সঠিকভাবে আবেদন না করায়, এদের আবেদন বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই বিষয়ে কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে। আর আইনে থাকায় সঠিকভাবে আবেদন করলেও তথ্যের ঘাটতি থাকা ৭৭টি দলকে ঘাটতি থাকা তথ্য দেওয়ার জন্য ১৫ দিন সময় দিয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া দুইটি দল নিজেরাই আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিজেরাই প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছে যে দুই দল: ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ।
যে ১৪টি দলের আবেদন বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে:
মুসকিল লীগ; বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ; বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ); বৈরাবরী পার্টি; বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ননপ্রবাসী কল্যাণ দল; বাংলাদেশ জনমত পার্টি; বাংলাদেশে ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম); নতুন ধারা বাংলাদেশ-এনডিবি; মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি; ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ); সাধারণ জনতা পার্টি (জিপিপি); জাতীয় ইসলামী মহাজোট; বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ; এবং স্বদেশ কল্যাণ কর্মসূচি।
ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকলো যে ৭৭ দল:
নাগরিক ঐক্য; বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি; নৈতিক সমাজ; বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ; বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি; নতুন বাংলা; বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি); বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি); প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ); বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি; বাংলাদেশ আম জনতা পার্টি ও বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি (বাংলাদেশ টিজেপি)।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম; সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ; বাংলাদেশ এলডিপি; বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি; বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রিন পার্টি; বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি; বাংলাদেশ সর্বজনীন দল; গণরাজনৈতিক জোট-গর্জো; বাংলাদেশ বেকার সমাজ; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলামী পার্টি; , বাংলাদেশ হিন্দু লীগ; বাংলাদেশ জাতীয় দল; জাতীয় জনতা পার্টি; বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ; বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনডিপি); কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি); ভাসানী অনুসারী পরিষদ; নাকফুল বাংলাদেশ; মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন; বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি-বিএইচপি; বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস; যুব স্বেচ্ছাসেবক লী; ন্যাপ (ভাসানী); বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ; , বাংলাদেশ জাতীয় লীগ; বাংলাদেশ মাইনরিটি পিপলস পার্টি; বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গ লীগ; রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন; বাংলাদেশ সনাতন পার্টি; বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি); জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি); বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ; বাংলাদেশ লেবার পার্টি; বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি); জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় ইনফাস পার্টি; ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি); বাংলাদেশ মানবতাবাদী দল; বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট গ্রিন পার্টি; বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ; বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি; মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড; গণঅধিকার পার্টি; বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি; বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বিপিপি; বাংলাদেশ গরিব পার্টি।
জাতীয় লীগ; বাংলাদেশ লেবার পার্টি; বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন; বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টি; বাংলাদেশ সৎ সংগ্রামী ভোটার পার্টি; বাংলাদেশ জনতা পার্টি; ডেমোক্রেটিক পার্টি; বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী গ্রুপ); জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাজাহান সিরাজ); বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিজেএল); জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি; বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি) এবং ফরওয়ার্ড পার্টি।
এরআগে নতুন দলের নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কোনো দলের একটি শর্তও যদি অপূর্ণ থাকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে এক শতাংশ কম থাকলেও নিবন্ধন পাবে না। যে কোনো দলের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য হবে।
তিনি জানান, নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকার শর্ত পূরণ করতে হবে।
২০০৮ সাল থেকে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর পর ৪৪টি দল নিবন্ধন পায়। এরমধ্যে ৫টি দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বর্তমানে নিবন্ধিত রয়েছে ৩৯টি দল। শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধন পেলেও স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালত অবৈধ ঘোষণা করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গেজেট প্রকাশ; তাতে বলা হয়, আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় আরপিও অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন না করায় ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন এবং ভোটের পরে ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি, ২০২১ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
ফেরদৌস কোরেশীর দল পিডিপির মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা দপ্তরের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা পায়নি কমিশন।
শফিউল আলম প্রধানের জাগপার পক্ষ থেকে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, এক তৃতীয়াংশ জেলা, ১০০ উপজেলা/থানায় তাদের কোনো দলীয় কার্যালয় নেই। ১০০টি উপজেলায় ২০০ জন ভোটার সদস্যও তাদের নেই। আর কাজী ফারুকের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের কাছে কমিশন যেসব তথ্য চেয়েছিল তা দিতেও ব্যর্থ হয় দলটি।
টিএইচ