২০২২ সালে নিভে গেছে যেসব তারা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০৮:৩১ পিএম
২০২২ সালে নিভে গেছে যেসব তারা

আর মাত্র সাত দিন বাকি। বিদায় নেবে ২০২২ সাল। নতুন বছর কড়া নাড়ছে দরোজায়। ২০২২ সালে করোনার প্রকোপ কাটিয়ে অনেকে দেখেছেন আশার আলো। আবার অনেকের আলো নিভে গিয়েছে চিরতরে। যারা একসময় তাদের প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে আলোকিত করেছেন রাজনীতির মাঠ কিংবা শিল্পাঙ্গন। বছর শেষে পেছন ফিরে তাকানোর এই আয়োজনে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি তাদের—

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
বিশ্ববাসীকে শোকে মাতিয়ে এ বছরের ৮ সেপ্টেম্বর চলে গেলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এলিজাবেথের জন্ম হয়েছিল ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল। ৯৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের রানি ছিলেন। তিনি তার রাজত্বকালে যুক্তরাজ্য ছাড়াও আরও প্রায় ৩২টি দেশের রানি ছিলেন এবং মৃত্যুকালে তার রাজত্ব ছিল ১৪টি কমনওয়েলথ রাজ্যের উপর। তার ৭০ বছর ২১৪ দিনের রাজত্ব ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম এবং তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় যাবত ক্ষমতায় থাকা নারী রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।

১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের মেফেয়ারের উইন্ডসরে ইয়র্কের ডিউক এবং ডাচেস (পরে রাজা জর্জ এবং রাণী এলিজাবেথ)-এর প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাড়িতেই লেখাপড়া করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ স্থলসেনাবাহিনীর নারী বিভাগ অগজিলিয়ারি টেরটোরিয়াল সার্ভিসে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপকে বিয়ে করেন। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চার সন্তান। এরা হলেন, যুবরাজ চার্লস; রাজকুমারী অ্যান; যুবরাজ অ্যান্ড্রৃ এবং যুবরাজ এডওয়ার্ড।

সাজেদা চৌধুরী
দুই হাজার বাইশ যেন বিষে ভরা বছর। নানান দুর্বিপাক দুর্ঘটনার মধ্যেই বাইশের ১২ সেপ্টেম্বর ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন আ.লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জাতীয় সংসদের উপনেতা ৮৭ বছর বয়সী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

সাজেদা চৌধুরী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি ফরিদপুর–২ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৩৫ সালে। পঞ্চাশের দশকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর সংকটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সাজেদা চৌধুরী বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর নবম জাতীয় সংসদে সাজেদা চৌধুরীকে প্রথমবার উপনেতা করা হয়। এরপর দশম সংসদেও তিনি উপনেতার দায়িত্ব পান।

আবদুল গাফফার চৌধুরী
এ বছর বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীও চলে গেছেন। বাইশের ১৯ মে বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন একজন গ্রন্থকার, কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো-এর রচয়িতা। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয়বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন।

পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা জীবনে ‘ডানপিটে শওকত’, ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘নাম না জানা ভোরে’, ‘নীল যমুনা’, ‘শেষ রজনীর চাঁদ’ ও ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’–এর মতো ৩৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নামের একটি ফিল্মও প্রযোজনা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেও বাংলা সাহিত্যের ভুবনে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পদক, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, ইউনেসকো সাহিত্য পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পদক, সংহতি আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর গাফ্ফার চৌধুরী স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান এবং ২২ বছর বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেননি।

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনও চলে গেছেন এই বাইশেই। বাইশের ১৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় গুলশানের নিজবাসায় ৮৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকারের হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এরপর তিনি হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। কিন্তু তাকে ১৯৯২ সালে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়। তারপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। তিনি বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

পীর হাবিবুর রহমান
সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ৫৮ বছর বয়সে মারা গেছেন।

২০২১ সালের অক্টোবরে মুম্বাই জাসলুক হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে ক্যানসারমুক্ত হন পীর হাবিবুর রহমান। দেশে ফিরে গত ২২ জানুয়ারি তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহর পরামর্শে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনামুক্ত হলেও কিডনি জটিলতার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন। বরেণ্য এ সাংবাদিকের জন্ম ১৯৬৩ সালের ১২ নভেম্বর সুনামগঞ্জ শহরে।

লতা মঙ্গেশকর
৯২ বছরে শেষ হলো কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের কর্মময় পথচলাও দুই হাজার বাইশে শেষ হয়েছে। এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সাত দশক ধরে দর্শক ও সমালোচকের হৃদয় তৃপ্ত করে চলা ভারতীয় সংগীতের এই কিংবদন্তি ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন। কিন্তু তার সংগীত ভারত ছাপিয়ে তাকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বসংগীতের দরবারে। লতা মঙ্গেশকর গেয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার গান। তিনি ৩৬টি ভাষায় গান করেছেন। এর মধ্যে আছে বাংলাও।

২০০১ সালে লতা মঙ্গেশকর ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্ন অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।

গায়ক আকবর
যশোরের আকবর আলি গাজী। পেশায় ছিলেন একজন রিকশাচালক। হানিফ সংকেতের ইত্যাদির মঞ্চে আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে কিশোর কুমারের গান গেয়ে পরিচিতি পান তিনি। রাতারাতি রিকশাচালক থেকে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। এরপর নিজের মৌলিক গান ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ দিয়ে করেন বাজিমাত। গানটির অডিও-ভিডিও দুটোই ছিল সুপারহিট। দেশ-বিদেশের মঞ্চে গান গেয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি।

কিডনির অসুখ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে ছন্দপতন ঘটে জীবনের। হাজারো ভক্তকে কাঁদিয়ে দুই হাজার বাইশের ১৩ নভেম্বর অকালে পরলোক গমন করেন তিনি।
আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ

এই বাইশেই ভক্ত-অনুরাগীদের শোকে ভাসিয়ে খুব অকালে চলে গেলেন দেশবরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। তার আবৃত্তি শোনেননি বা শুনে মুগ্ধ হননি এমন বাঙালি নেই বললেই চলে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতের আইসিইউতে ভর্তি থাকার পর তিনি এ বছরের ১ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

হাসান আরিফ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনরত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন। আশির দশক থেকে নিজে আবৃত্তি করেছেন এবং আবৃত্তিচর্চা ও প্রশিক্ষণে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন হাসান আরিফ।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার
কিংবদন্তি গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর ৭৯ বছর বয়সে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। এ বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সকালে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ছয় দশক ধরে বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য ২০ হাজারের মতো গান রচনা করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। গীতিকবিতায় অবদান রাখার জন্য ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। গত বছর পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক। পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

বিবিসি বাংলার তৈরি ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশটি বাংলা গানের’ তালিকায় ঠাঁই পায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা তিনটি গান।

১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দির তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে যুক্ত হন চলচ্চিত্রে। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

মাসুম আজিজ
একুশে পদকপ্রাপ্ত জনপ্রিয় নাট্যকার ও অভিনেতা মাসুম আজিজ মারা গেছেন এ বছরের ১৭ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায়।

মাসুম আজিজ দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী এবং দুই সন্তান রেখে গেছেন।

চলতি বছরের সেপ্টম্বরের ২৪ তারিখ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে ৮ অক্টোবর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন থিয়েটারে কাজের মাধ্যমে মাসুম আজিজের অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, সালাউদ্দিন লাভলুর ‘তিন গ্যাদা’সহ অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০২২ সালে একুশে পদক পান মাসুম আজিজ।

শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। পত্র-পত্রিকায় খবর এসেছে এ বছরের ২১ নভেম্বর শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কিন্তু তিনি তো আছেন। তিনি আছেন শিশুদের পাঠ্যবইয়ে, গল্পে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে।

আলী ইমাম এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টির মতো পুস্তক রচনা করেছেন ও ৪০টির মতো গ্রন্থ রচনা করেছেন। শিশু মনস্তত্ত্ব, রোমাঞ্চ এবং মানবতা ধরনের বিষয় তার কাহিনিতে উঠে এসেছে।তিনি সহজ সরল ভাষায় লিখেছেন। তার লেখায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, রোমাঞ্চকর উপন্যাস ও ইতিহাস সংশ্লিষ্ট রচনা লক্ষ্যণীয়। আলী ইমাম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন এবং ২০০৬ সালে চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

শর্মিলী আহমেদ
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদও বাইশের ৮ জুলাই সকালে ৭৫ বছর বয়সে নিজবাড়িতেই মারা গেছেন।

শর্মিলী আহমেদের ১৯৪৭ সালে। মাত্র চার বছর বয়সে অভিনয় শুরু। ষাটের দশকের অন্যতম নায়িকা ছিলেন শর্মিলী আহমেদ। বয়সকে তুড়ি মেরে প্রায় পাঁচ দশক ধরে বিরতিহীন অভিনয় করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ নাটক ও ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এ অভিনেত্রী।

মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রে সাবলীল অভিনয় দিয়ে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন শর্মিলী আহমেদ। নায়িকা পরবর্তী সময়ে মা, দাদি কিংবা ভাবির চরিত্রেও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন তিনি। শোবিজ অঙ্গনে সবার কাছে ‘মা’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন ৫২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান দুই হাজার বাইশেই।

শেন ওয়ার্ন সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার ছিলেন। উইজডেনের শতাব্দী সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন ছিলেন ওয়ার্ন। তিনি ১৫ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৪৫ টেস্টে অংশ নিয়ে রেকর্ড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০৮ উইকেট শিকার করেছেন। তার চেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেন শ্রীলংকার কিংবদন্তি ক্রিকেটার মুত্তিয়া মুরালিধরন।

আন্তর্জাতিক ২৯৩টি ওয়ানডে ম্যাচে অংশ নিয়ে ২৯৩ উইকেট শিকার করেন শেন ওয়ার্ন। জিতেছেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপ। ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই ছিলেন ম্যাচ সেরা।

ঐন্দ্রিলা শর্মা
এ বছরেরই ২০ নভেম্বর চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মাত্র ২৪ বছরে বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তুমুল জনপ্রিয় ভারতীয় টিভি অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা।

২০১৫ সালে টেন্টস নামক বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। প্রায় দেড় বছরের লড়াই শেষে ক্যানসার জয় করেন তিনি। ১৬টি কেমোথেরাপি ও ৩৩টি রেডিয়েশনের পর সুস্থ হন এই অভিনেত্রী। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঐন্দ্রিলার ডান ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে। এরপর ফের মরণব্যাধি ক্যানসার থাবা বসায় অভিনেত্রীর শরীরে। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হয়ে পর্দায় ফিরেন এই অভিনেত্রী।

কিন্তু আচমকাই গত ১ নভেম্বর রাতে তার স্ট্রোক হয়। তারপর থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই নায়িকা।

ছোটপর্দায় ‘ঝুমুর’-এর সঙ্গে ঐন্দ্রিলার ক্যারিয়ার শুরু। এরপর ‘জীবন জ্যোতি’ ধারাবাহিকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ঐন্দ্রিলা। সিরিয়ালের পাশাপাশি ‘শেষ থেকে শুরু’ সিনেমায় অভিনেতা জিতের বোনের ভূমিকায় দেখা যায় ঐন্দ্রিলাকে। এ ছাড়াও পরিচালক অমিত দাসের পরবর্তী সিনেমায় কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে তার অভিনয়ের কথা ছিল।

কাজী আনোয়ার হোসেন
লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক এবং জনপ্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনও মারা গেছেন এ বছরই। বাইশের ১৯ জানুয়ারি তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ছিল কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার বাবা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন।

সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন।যা বাংলা সাহিত্যে তুমুল জনপ্রিয়।

ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল
মমস্তিষ্কে টিউমার নিয়ে বছরের ১৯ এপ্রিল মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা গেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল। জাতীয় দলের বাঁ-হাতি এই স্পিনার তিন বছরের বেশি সময় ধরে ব্রেইন টিউমারের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন।

মোশাররফ রুবেল জাতীয় দলের হয়ে ৫টি ওয়ানডে ম্যাচে অংশ নিয়ে ৪ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ২৬ রান সংগ্রহ করেন।

ঘরোয়া লিগে নিয়মিত খেলে যাওয়া রুবেল প্রথম শ্রেণির ১১২ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৩৯২ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে দুই সেঞ্চুরি আর ১৬টি ফিফটির সাহায্যে ৩ হাজার ৩০৫ রান সংগ্রহ করেন।

শিনেজা আবে
এ বছরের ৮ জুলাই দুর্বৃত্তের গুলিতে মারা গেছেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৬৭ বছর বয়সী শিনজো আবে।

জাপানে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আবে। তিনি দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের (এলডিপি) ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

পণ্ডিত ভজন সোপরি
এ বছরের ২ জুন ৭৩ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্ত সন্তুরবাদক পণ্ডিত ভজন সোপরি। তিনি কোলন ক্যানসারে ভুগছিলেন।

১৯৪৮ সালে জম্মু-কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করেন ভজন সোপরি। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে প্রথমবার মঞ্চে পারফর্ম করেন। দীর্ঘ সাত দশকের ক্যারিয়ারে মিশর, ইংল্যান্ড, জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতকে পৌঁছে দিয়েছেন এই গুণী শিল্পী।

কৃষ্ণকুমার কুনাথ
মাত্র ৫৪ বছর বয়সে গাইতে গাইতে চলে গেলেন বলিউডের তারকা গায়ক কৃষ্ণকুমার কুনাথ। এ বছরের ৩১ মে কলকাতায় নজরুল মঞ্চে গানের অনুষ্ঠান ছিল তার। মঞ্চে গান গাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের প্রথম সারির এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই মৃত ঘোষণা করা হয় তাকে।

কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমার ছিলেন তার প্রেরণা। তাকে দেখেই মূলত সঙ্গীত জীবনে আসেন তিনি।

দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর কয়েক মাসের জন্য মার্কেটিং এক্সিকিউটিভের কাজ করেন কেকে। এর কয়েক বছর পর ১৯৯৪ সালে তিনি মুম্বাই পাড়ি দেন বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে।

বাংলা, হিন্দি, তামিল, কন্নড়, মালয়ালামসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় গান গেয়েছেন কেকে। কেকের কথা উঠলেই অনুরাগীদের মনে ভেসে ওঠে ‘দিল ইবাদত’, ‘তারাপ তারাপ’, ‘আঁখো মে তেরি’, ‘জারা সা’, ‘খুদা জানে’, ‘তু যো মিলা’, ‘কেয়া মুঝে পেয়ার হে’, ‘তুহি মেরি সাব হে’, ‘বিতে লামহে’ সহ আরও অনেক অনেক গান।

কেএস