আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ২০২০-২১ এর তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪.৩৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পাহাড় ও সমতল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ২০২০-২১ এর তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪.৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ১০৮ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। ২০২০-২১ এ এই বরাদ্দ ছিল ২৫০৮ কোটি টাকা, ২০২১-২২ এ হয়েছে ২৪০০ কোটি টাকা। অবশ্য বর্তমান মুদ্রাস্ফীতিকে বিবেচনায় আনা হলে এই বাজট হ্রাসের পরিমাণ বেড়ে ৬ শতাংশে দাঁড়াবে।
রোববার (১৫) জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে `মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের` উদ্যোগে আয়োজিত "বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বাজেটে কতটা বরাদ্দ রাখা হয় এবং কতটা ব্যয় করা হয়" শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের ইস্তেহারে স্পষ্ট বলা আছে যে আমরা আদিবাসীদের সাথে কি ধরনের আচরণ করবো।
মন্ত্রী বলেন, এদের প্রতি যা হয় তা সত্য যেটা কোনোভাবেই ঠিক নয়।যদিও সরকার থেকে আমরা সবসময় ন্যায্যতার চেষ্টায় আছি। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগীর জন্য তারা এমন পরিস্থিতি স্বীকার করছে।
বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী ২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।
তিনি বলেন, বলেন আদিবাসীরা চরম্ভাবে বঞ্চিত। সমতলের অবস্থা খুব খারাপ কৃষক হিসেবে ও বেচে থাকতে পারছেনা তারা। এবং দেখা যাচ্ছে একজন হিন্দু আদীবাসিকে হিন্দু বলে তার জমি নিয়ে যাচ্ছে এবং রেজিস্ট্রি অফিস ও তা রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরকারের একটা গাইডেন্স থাকা দরকার যে কিভাবে সমতলের আদিবাসীদের উপরে কিভাবে আচরণ করা হবে।
এমপি বলেন, তাদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় হবে তখন তাদের জন্য পৃথক বাজেট হবে এবং সেক্ষেত্রে বৈষম্য অনেকটা কম হবে।
সুতরাং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়ের বিকল্প নেই। এবং তাদের মাতৃভাষায় পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা ও করতে হবে বলে তিনি প্রস্তাব দেন। তাদের প্রতি যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের আছে বলে তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।
মানবিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর আবুল বারাকাতের (পিএইচডি) উপস্থাপনায় একটি সমীক্ষা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে এ সমতল আদিবাসীদের বাজেট বরাদ্দ ৭.৮৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, পাহাড়ের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে তা ১.৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
উল্লিখিত তথ্যগুলো "বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বাজেটে কতটা বরাদ্দ রাখা হয় এবং কতটা ব্যয়
সেখানে বলা হয়েছে জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের জন্য যেমন পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়না, তেমনি বাজেট তৈরি করার প্রক্রিয়ার মধ্যেও আদিবাসীদের অংশগ্রহণও খুব সামান্য। এমনকি আদিবাসী নেতা ও জনগণের কাছেও জানতে চাওয়া হয় না যে তাদের কী প্রয়োজন, কতটা প্রয়োজন।
যে কারণে খুব একটা দরকারি নয় এমন বিষয়ও বাজেটে ধরা হয়, আবার কিছু জরুরি প্রয়োজনও উপেক্ষিত হয়। সেজন্যই আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ, বাজেট ব্যয় এবং প্রকৃত প্রয়োজনের ব্যাপারটি উপেক্ষিতই থেকে যায়।
আদিবাসীদের জন্য কিছু জরুরি খাতও বাজেটে নাই বলে সমীক্ষা রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সমতলের আদিবাসীদের জন্য কাজ না থাকার মাসগুলোতে খাদ্য সহায়তা প্রদান, দখলকৃত ভূমি উদ্ধারের জন্য আইনী ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান, মাতৃভাষায় শিক্ষা, ন্যাখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রাপ্তি, জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণদানসহ বিভিন্ন অনুদান প্রদান এবং আদিবাসী সংস্কৃতি ও জ্ঞানকে বর্ধিত করা।
আর "ক্রিটিক্যাল মিসিং` হিসেবে বলা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কাউন্সিল ভূমি কমিশনের জন্য যথাযথ বাজেট, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত সুরক্ষা ইস্যুটি না থাকা। আদিবাসীদের জন্য বাজেট অপর্যাপ্ত হলেও কোন কোন প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বাজেট পুরোটা খরচও হয়না। ফলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ ঠিকমতো বুঝতেও পারেনা কতটা কীভাবে তাদের উন্নয়নের জন্য খরচ করা হচ্ছে।
আদিবাসী নারী সবচেয়ে অবহেলিত ও মানবাধিকার বঞ্চিত হলেও মোট জেন্ডার বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ রাখা হয়েছে আদিবাসী নারীর ক্ষমতায়নের জন্য।
সুপারিশমালায় আদিবাসীদের জন্য বাজেট দ্বিগুণ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ মানব উন্নয়ন খাতে বাজেট তিনগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আদিবাসীদের প্রয়োজনের কথা ভেবে বরাদ্দ রাখা দরকার এবং বাজেট তৈরি করার সময় "বটম আপ এপ্রোচের" ভিত্তিতে করতে হবে।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনার সঞ্চালনায় বাজেট উপস্হাপন করেন,মানবিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর আবুল বারাকাত (পিএইচডি)। বাংলাদেশ ইনডিজিনাস পিপলস ফোরামের (বিআইপিএফ) সেক্রেটারি মি.সনজিব ড্রং। সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব সুপ্রদ্বীপ চাকমা প্রমুখ।
টিএইচ