- কম দামে পাওয়া যায় হরেক রকম জিনিস
- ২০০/৫০০ টাকায় পাওয়া যায় নষ্ট ট্যাব, মোবাইল
- ভাগ্যের উপর থাকে ক্রেতার ব্যবহার নিশ্চয়তা
- গ্যারান্টি নেই এসব জিনিসের
- প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ ভাগ
রাজধানীতে আসা মানুষের প্রায় সবার ইচ্ছা থাকে গুলিস্তানে গিয়ে একটা ঢুঁ মারা। সেখানে আছে কম দামে হরেক পণ্য কেনার সুযোগ। নতুন জিনিসের পাশাপাশি কম টাকায় মেলে পুরনো অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স। এমনকি চোরাই পণ্যও পাওয়া যায় গ্যারান্টি ছাড়া। এর জন্য আছে পণ্যভিত্তিক হাট। তেমনই আছে চোরাই মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার-ল্যাপটপের ভাসমান দোকান। এই চোরাই মোবাইল ফোনের হাট গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ও মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম স্ংলগ্ন ফুটপাত জুড়ে বসে থাকে। এছাড়াও নগর ভবন থেকে পুলিশ সদর দপ্তরের গেট ও ওসমানী উদ্যানের ফুটপাতগুলো ঘিরে আছে এসব ভাসমান মোবাইল, পুরাতন নষ্ট ইলেকট্রনিকসের দোকান। এখানে বহুবছর ধরে এভাবে ব্যবসা করে আসছেন গুলিস্তানের এসমস্ত ফুটপাতের দোকানদার। কিন্তু বর্তমানে তাদের এ ব্যবসায় ও মন্দা দেখা দিচ্ছে। এখন আর আগের মত বেচা-বিক্রি নেই বলছেন এখানকার দোকানদাররা।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গুলিস্তানের মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম ও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি জায়গা এবং ওসমানী উদ্যানের আশপাশের সকল ফুটপাত দখল করে প্রায় শতাধিক চোরাই ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান রয়েছে।
মানিক নামে এক দোকানদার বলেন, খুব কম দামে আমরা এগুলো বিক্রি করি। এই যে ট্যাব দেখছেন এটার দাম ৫০০ টাকা, নোকিয়া ফোনটার দাম ৪০০ টাকা, রাউটার টা পারে ৫০০ টাকা। কিন্তু এগুলোর গ্যারান্টি নেই।
গুলিস্তানের এসব ভাসমান চোরাই হাটে নামীদামি ব্র্যান্ডের উচ্চমূল্যের মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। আইফোন টেন প্লাস থেকে শুরু করে স্যামসাং, সিমফনি, লাভা, ওপপো, নোকিয়াসহ সব ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ মোবাইল ফোনের পার্স মেলে তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এসব পুরনো। কোনো গ্যারান্টি নেই এসবের।
নামে মোবাইল ফোনের হাট হলেও এখানে পাওয়া যায় ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিকের নানা পণ্য। কম্পিউটারের মনিটর, ব্র্যান্ডের ক্যামেরা, ড্রিল মেশিন, ইস্ত্রি, টেলিফোন, সাউন্ড বক্স, চার্জার লাইট, টেপরেকর্ডার, চুলে হিট করা মেশিন, ট্রিপট, বৈদ্যুতিক বাল্ব, সিলিং ফ্যান, টিভির রিমোট, ফোনের চার্জার, মাল্টিপ্লাগ, মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের কর্ট। এমনকি ডাক্তারি যন্ত্রপাতিও মেলে এই অবৈধ হাটে।
নানা ধরনের এত ইলেকট্রনিকস জিনিস কোথায় থেকে নিয়ে আসা হয় এবং এগুলো চোরাই কি-না জানতে চাইলে, আলম নামে গুলিস্তানের পুরাতন এ জিনিসের এক দোকানের মালিক বলেন, আমরা এগুলো কম দামে বিভিন্ন হকারদের কাছ থেকে কিনে আনি এখন তারা কিভাবে পায় সেটা জানি না। তবে আমরা চুরি করে আনি না।
এসব জিনিসের দাম কি রকম- জানতে চাইলে মানিক নামে এক দোকানদার বলেন, খুব কম দামে আমরা এগুলো বিক্রি করি। এই যে ট্যাব দেখছেন এটার দাম ৫০০ টাকা, নোকিয়া ফোনটার দাম ৪০০ টাকা, রাউটার টা পারে ৫০০ টাকা। কিন্তু এগুলোর গ্যারান্টি নেই। তবে, সার্ভিসিংয়ের দোকানে কিছু টাকা দিলে ঠিক করে দেয়। পরবর্তীতে অনেকদিন ব্যবহার করা যায়।
গ্যারান্টি ছাড়া ইলেকট্রনিক্স পণ্য মানুষ কিনে- জানতে চাইলে আরেক দোকানদার ওসমান বলেন, না কিনলে তো আমরা বিক্রি করতে বসতাম না। তারা কিনে বলেই আমরা বসি এখানে। এখানে নিম্ন শ্রেণির, মধ্য বিত্ত মানুষই বেশি আসে।
বর্তমানে পুরাতন, চোরাই জিনিসের ব্যবসা কেমন জানতে চাইলে- সবুজ নামের এক দোকানদার বলেন, ব্যবসা হোক বা না হোক আমরা এখানে বসি। তবে, ব্যবসার অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক খারাপ যাচ্ছে।
চোরাই দোকান থেকে `ব্লেন্ডার মেশিনের দাম করতে থাকা রুস্তম নামে এক বয়স্ক লোকের কাছে এখান থেকে গ্যারান্টি ছাড়াই নষ্ট ব্লেন্ডার কিনতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা ব্লেন্ডার দরকার বাসায়। কিন্তু রিকশা চালাই আর কয় টাকা আয় করি? এজন্য এখান থেকে কিনতে এসেছি।
এ ব্যাপারে মতিঝিল থানার এডিসি মাহমুদুল হক মিঠু আমার সংবাদকে বলেন, এ সমস্ত এলাকায় আমাদের অভিযান চলমান। বিভিন্ন সময়ে আমরা এখান থেকে অনেক চোরাকারবারিকে আটক করে থাকি।
এরা এখানে বসে কিভাবে জানতে চাইলে এডিসি মাহমুদুল হক মিঠু বলেন, মুলত লুকিয়ে-লুকিয়ে ভাসমান ভাবে বসে। আবার অভিযান শুরু হলে পালিয়ে যায়। তবে বিভিন্ন শ্রেণির অভাবী মানুষ এখান থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক জিনিস কম দামে কিনতে পারে এটাও একটা ভালো দিক এবং তারাও পেটের দায় ব্যবসা করে সেক্ষেত্রে কিছু ব্যপারে তারা ছাড় পায়। কিন্তু এর আড়ালে যেটা অপরাধ চোরাকারবারি চলে সে ব্যাপারে আমরা তৎপর আছি।
কেএস