বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার আড়ালে ‘এমএলএম’ ব্যবসার মাধ্যমে কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূল হোতা আব্দুল কাদেরসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, রাজধানীর প্রগতি স্বরণি, মধ্য বাড্ডা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় একজন ভিকটিম, চারটি কম্পিউটার, চারটি ল্যাপটপ, ১৭টি মোবাইল, নগদ ৯৭ হাজার ৩৮০ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভাউচার, চুক্তিনামা, প্যাড, সীল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (৮) ফেব্রুয়ারি দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টার কাওরান বাজার থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবত মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার আড়ালে এমএলএম ব্যবসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়।
তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার নামের মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে।
তিনি বলেন, তারা মূলত সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে মাসিক ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানানোর কথা বলে অনুদান হিসেবে জন প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো। এরই মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক মানুষের কাছে থেকে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে বলে আমরা জানতে পারি।
এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত মো. আব্দুল কাদের (৪৪) 'কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ২০২০ সালে ডিএমপি ঢাকার বাড্ডা থানাধীন প্রগতি স্বরণি, মধ্য বাড্ডা এলাকার প্লট নং-৫ (এ-৫), বাড়ী নং-খ-১৮৭, ৬ষ্ঠ তালায় ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে। পরবর্তীতে সে ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’ এ প্রতিষ্ঠানের আড়ালে বহুল প্রচলিত ‘এমএলএম’ ব্যবহার করে তার ব্যবসার প্রসার ঘটায়।
সে ও তার সহযোগীরা মূলত সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে মাসিক ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানানোর কথা বলে, অনুদান হিসেবে জন প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো। কাজের নামে দাতা সদস্যদের দিয়ে এমএলএম আদলে নতুন দাতা সদস্য কাজ হতো।
তাদেরকে (ভুক্তভোগী) বলা হতো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর বেতন ১০ হাজার টাকা হবে। কাজ হিসেবে বলা হত এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে কোনো দরিদ্র পরিবার অর্থাভাবে মেয়ে বিয়ে দিতে না পারলে এবং নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হলে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের জানাতে। এমন সহজ চাকরির আশায় ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর তাদেরকে জানানো হতো নতুন দাতা সদস্য আনতে হবে। নতুন সদস্য আনতে না পারলে বেতন হবে না। অথচ এ চক্রটি টাকা নেওয়ার আগে লোক সংগ্রহের বিষয়ে কিছুই বলা হতো না।
র্যাব -১ অধিনায়ক আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে বেতন না পেয়ে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার অফিসে গেলে তাদের মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখানো হতো। অধিকাংশ সদস্যই সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এভাবেই গ্রেপ্তারকৃতরা কয়েক হাজার গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগীরা কিভাবে তাদের টাকা ফেরত পাবে প্রশ্নের জবাবে র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, এখন যেহেতু প্রতারক চক্র আইনের আওতায় এসেছে সুতরাং যারা এখানে টাকা দিয়েছে তারা যদি সবাই এক হয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে থাকে তাহলে অবশ্যই তারা তাদের টাকা ফেরত পেতে পারে।
এআরএস