পূর্বাভাস কোত্থেকে আসে? বর্তমানের ডেটা বিশ্লেষণে অতীতের অভিজ্ঞতা। ধরুন, অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমান একেবারেই বেমানান, তাহলে পূর্বাভাস কি নির্ভুল হবে? দেশে ঘূর্ণিঝড়ের সনাতনী সতর্কবার্তাগুলো তো সমুদ্রগামী জাহাজ আর বন্দরের নিরাপত্তার জন্য, জনগণ বা জানমাল নিয়ে কী? শুধু কি মোখার ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তি, গেল বছরের সিত্রাংয়ের পূর্বাভাসেও তো বিভ্রান্তি ছিল।
অপরাধ বা ভুল শনাক্ত করে অভিযুক্তকে সামনে দাঁড় করানোই গণমাধ্যমের কাজ। তবে বছরের পর ধরে চলা বিভ্রান্তির পেছনের কারণ অনুসন্ধান আরও বড় কাজ। কানপাতলা হওয়া কাজের কথা নয়। জলবায়ু পরিবর্তন যে কতটা বেপরোয়া, গভীর বিপদের বার্তা বহন করছে তা কিন্তু আপনার জনতুষ্টিবাদীরা জানবেন বা বলবেন না। এজন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের মলিন মুখের দিকে তাকাতে হবে।
মূলত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এতটাই বহুমুখী অনিশ্চয়তায় ভরা যে প্রাকৃতিক পূর্বাভাসের শুধু সনাতনীই নয়, বর্তমান মডেলগুলোও অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বাস্তবতার সঙ্গে অভিজ্ঞতা মিলছেই না। অতীতে ঘূর্ণিঝড়ে ভারীবর্ষণে বন্যার চিত্র দেখা গেলেও এবারই প্রথম তাপপ্রবাহে দগ্ধ হতে হলো। আগে ভূভাগে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ১৫-৩০ ঘণ্টা হলেও মোখা টিকলো মাত্র ৬ ঘণ্টা, তাও শুধু সেন্টমার্টিন আর টেকনাফে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোখার চারপাশে বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত তাপের চাপে উপকূলে আঘাত হানার সময় জলীয়বাষ্প কেন্দ্রীভুত হয়। তাছাড়া যথেষ্ট জলীয় বাষ্পও টেনে নিতে পারেনি। ভূখণ্ডে এসে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পাহাড়ে বাধা পায় মেঘমালা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মোখার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীর ঘূর্ণিঝড়গুলোর পূর্বাভাস দেবেন। মানে আগামীতেও পূর্বাভাসে বিভ্রান্ত থাকবে। কারণ জলবায়ুর পরিবর্তনের অনিশ্চিত প্রভাব তো তখনও থাকবে।
এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কাজ হলো আবহাওয়া অধিদপ্তর কিংবা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ঘাড়ে বন্দুক রাখার বদলে সংবাদ পরিবেশনে সতর্ক থাকা। প্রকৃতির বিরূপ চেহারা নিয়ে ভয়, উদ্বেগ, অন্ধবিশ্বাস আর ঠাট্টাপ্রবণ সামাজিক মাধ্যমের স্রোতে গা না ভাসানোই সত্য অনুসন্ধানের ভালো পদক্ষেপ হতে পারে। আর সবচেয়ে ভালো সেটাই, জলবায়ু পরিবর্তন আর প্রভাব সম্পর্কে সর্বশেষ জানা, সঠিক ধারণা অর্জন করা। তাহলেই পূর্বাভাস বিভ্রান্তি কমবে।
(জলবায়ু ও পূর্বাভাস: ১৫ মে, ২০২৩। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)
এআরএস