মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার থেকে পড়ে মৃত্যু
বন্ধুর হদিস নেই, নেই ফ্লাইওভারের সিসিক্যামেরাও
আশেপাশের সিসিক্যামেরার ফুটেজ ধরেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টায় পুলিশ
সন্ধ্যার পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন ফুটওভার ব্রিজ কিংবা ফ্লাইওভারগুলোতে চলছে তরুণ-তরুণীদের আড্ডার নামে অবাধ মেলামেশা। ফুটওভার ব্রিজের এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। দাঁড়ানোর নিয়ম না থাকলেও ফ্লাইওভারগুলোতেও তরুণ-তরুণীদের এমন দৃশ্য নিত্যকার। গভীর রাতেও এমন দৃশ্য দেখা যায়। তবে রাতের ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে। যদিও ফুটওভার ব্রিজ কিংবা ফ্লাইওভার থাকে তাদের টহলের বাইরে। এই সুযোগেই ঘটছে হত্যা-আত্মহত্যার মতো ঘটনা।
সর্বশেষ গত রোববার গভীর রাতেও রমনা থানাধীন মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচে সোহাগ পরিবহন কাউন্টারের সামনে থেকে শাহিদা ইসলাম মিম (২৮) নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ বলছে, এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা— এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লাইওভারে সিসিক্যামেরা না থাকায় এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে বেগ পেতে হচ্ছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তবে নিচে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নিহত মিমের পরিবার বলছে, রোববার রাতে বন্ধুর সঙ্গে কফি খাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিল মিম। পরে গতকাল ভোরের দিকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর বাইরে এখন পর্যন্ত এ মৃত্যু নিয়ে তারা আর কিছুই জানেন না। মিমের লাশ বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে রমনা থানার সুরতহাল প্রতিবেদনকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমেনা খানম বলেন, রাতে আমরা খবর পেয়ে রমনা থানাধীন সোহাগ পরিবহন কাউন্টারের সামনের মালিবাগ মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে যাই। সেখান থেকে ওই তরুণীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠাই। এসআই আমেনা খানম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি রাত ৮টার দিকে তার এক বন্ধুর সঙ্গে কফি খাওয়ার কথা বলে হাতিরঝিলের বাসা থেকে বের হন তিনি। তিনি বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ড্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন। তাকে ফ্লাইওভার থেকে কেউ নিচে ফেলে দিয়েছে কি-না সে বিষয়টি এখনো জানতে পারিনি। ফ্লাইওভার থেকে পড়ার আগে সে ধর্ষিত বা নেশা জাতীয় কোনো কিছু খেয়েছিল কি-না সেটিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
ওসি আবুল হাসান বলেন, তার মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটনের জন্য পুলিশ কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাকে উপর থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে, নাকি তিনি নিজেই লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন, সেগুলো নিয়েই পুলিশ এখন কাজ করছে। তবে ফ্লাইওভারের উপর কোনো সিসিক্যামেরা নেই। মিমের বন্ধুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে এখনো আমরা পাইনি। তার মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তিনি ওই বন্ধুর নাম বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের উপর একটি বসার জায়গা ছিল সেখান থেকে সে অসাবধানতাবশত পড়ে গিয়েছে, নাকি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে সে বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে।
তবে বন্ধু ছাড়াও তার মৃত্যুর কারণ শনাক্তেও তদন্ত চলছে। নিহত নারী হাতিরঝিল থানার পশ্চিম রামপুরার বাগিচার টেকের মৃত শেখ আবু সাঈদ ও আজিমুন ইসলাম নাজমার মেয়ে। বর্তমানে হাতিরঝিল থানার ওমর আলী লেনে থাকতেন।