‘বিটিসিএল ও টেলিটককে প্রতিযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চায় জনগণ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
‘বিটিসিএল ও টেলিটককে প্রতিযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চায় জনগণ’

সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজারে প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্য। সেই সাথে কোন প্রতিষ্ঠান যাতে মনোপলি বা অলিগুপলি সৃষ্টি করতে না পারে সেটি রক্ষার দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের। যার অন্যতম উদ্দেশ্য সরকার জনগণকে ন্যায় সঙ্গত মূল্যে পন্য বা সেবা নিশ্চিত করতে পারে।

গতকাল ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এক ঘোষণায় বলেছেন টেলিটক, বিটিসিএল ও টেসিস কে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে দিবেন। বলা চলে বিক্রি করে দিবেন। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিটক, বিটিসিএল ও টেসিসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত না করে, এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভঙ্গুর ও কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করতে না পারার অক্ষমতার দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা না করে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছে কতিপয় উচ্চবিলাসী অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের সাথে যুক্ত ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের নীতি নির্ধারণী ব্যক্তিরাও। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা প্রদান করা এবং বাজারে একটি ভারসাম্য মূলক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। এই প্রতিষ্ঠান লাভজনক ভাবে গড়ে তোলার জন্য করা হয়নি। সরকার কখনো ব্যবসা করতে পারে না। সরকার বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য একটি ব্যালেন্স তৈরি করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন এ সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে বাজারে মনোপলি ও অলিগুপলি সৃষ্টি হবে। গ্রাহক সেবা পেতে অতিরিক্ত অর্থ এবং হয়রানির শিকার হতে হবে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত সরকার বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ২০০৮ সালে বিটিটিবিকে পাবলিক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের এমন কোন লাইসেন্স নাই যা তার নাই। যেমন ধরা যাক এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়ে বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠান আজ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে অথচ বিটিসিএল কিছুই করতে পারেনি। একইভাবে তার লোকাল ফলের জন্য আইসিএক্স এবং আন্তর্জাতিকের জন্য আইজিডব্লিউ, বিক্রয় করার জন্য আইআইজি এবং ট্রান্সমিশনের জন্য এনটিটিএন ,ও পিএসটিএন লাইসেন্স রয়েছে। অথচ টেলিকম ক্যাডার ভিত্তিক শত শত কর্মকর্তা নিয়ে সেই সাথে প্রায় কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ১৩ হাজার।

বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার অধিক সম্পদ আছে এই প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু দুর্নীতি আর জবাবদিহিতা না থাকার ফলে গ্রাহকরা যেমন কাঙ্খিত সেবা পায়নি ঠিক একইভাবে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রলোভন এর কারণে। এ সকল তদন্ত না করে বেসরকারি করন করার উদ্দেশ্য কি?

একইভাবে টেলিটক ২০০৪ সালে কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হলেও দুর্নীতি জবাবদিহিতা না থাকা এবং অবৈধ কারবারে নিয়োজিত থাকা এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কারণেই প্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা। সবার আগে এদের জবাবদিহিতা এবং স্বাস্থির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হতে পারে না।
আমরা বেসরকারি খাতে নয় বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টি এবং জনগণের কাঙ্খিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করুক বলে প্রত্যাশা করি।

/বিআরইউ