নেত্রেকোনার পূর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া এলাকার আব্দুর রবের ছেলে এহসান আহমেদ। নিজেকে পরিচয় দিতেন কানাডায় স্থায়ী বসবাসের গ্রিনকার্ড হোল্ডার। শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিচয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং দেশের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকের সন্তান পরিচয় দিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করতেন আকর্ষণীয় করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টার্গেট করতেন ধনী পরিবারের তরুণীদের। বিশেষ করে যারা বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় যেতে ইচ্ছুক এমন তরুণীরা তার প্রধান টার্গেট। প্রথমে পরিচিত হয়ে সরাসরি দেখা করতে যেতেন। সেখানে তার পরিচয় ও বেশভূষা বিশ্বাসযোগ্য করতে নামিদামি গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যেতেন।
সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেন এহসান। কানাডায় স্ত্রী হিসেবে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে গড়ে তোলেন প্রেমের সম্পর্ক। নানা কৌশলে হাতিয়ে নেন ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও। এরপরই শুরু করেন ব্ল্যাকমেইল। এভাবেই টার্গেট তরুণীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ভিডিও সংগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পরিচিতদের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার করে আসছিলেন এই প্রতারক।
রাজধানীর মুগদা থানায় ওই ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার পর বুধবার রাজধানীর রমনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এহসানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)’র সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ডিবি প্রধান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সাবেক এক ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রতারক এহসানের। তিনি নিজেকে কানাডা প্রবাসী, পিএইচডি ডিগ্রিধারী, বড় শিল্পপতি পরিবারের সন্তান পরিচয় দেন। তাদের গুলশানে বাড়ি ও বিলাসবহুল গাড়ির রয়েছে এমন তথ্য দেন। এই সকল পরিচয় ব্যবহার করে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। প্রেমের সুযোগে ভুক্তভোগী তরুণীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও। এই সকল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্বজনদের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন।
ডিবি প্রধান জানান, এর আগেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ—ফারদিন-সাকিবের মতো অনেক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে। এসব প্রতারক নিজেদেরকে মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সচিব, বড় ব্যবসায়ীর সন্তান দাবি করে মেয়েদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নামিদামি বাড়ি গাড়ীর প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক ও আর্থিক প্রতারণা করে আসছিলেন।
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, এহসান পড়াশোনা না করেও নিজেকে পিএইচডিধারী পরিচয় দিতেন। এমন কি কোনো দিন বিদেশে না যাওয়া এহসানের কানাডায় গ্রিনকার্ড রয়েছে। বিভিন্ন তরুণীদের কানাডায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর আমরা এখন পর্যন্ত শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলার প্রমাণ পেয়েছি।।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ বড়লোক, ব্যবসায়ী বা সরকারি চাকরিজীবী পরিচয় দিলে যাচাই করা উচিত। এছাড়া অনলাইনে বন্ধুত্বের নামে ব্যক্তিগত ছবি আদান প্রদানে সতর্ক হতে হবে। তবে কেউ যদি কারো মাধ্যমে প্রতারিত হন তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিতে হবে।
এইচআর