রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি ওরাংকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক মো. আশফাকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের ফাঁসিসহ দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে প্রীতি ওরাংয়ের পরিবার ও চা শ্রমিক এবং গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক সংগঠন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ভুক্তভোগীর স্বজন, চা শ্রমিক এবং গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রভাবশালী সাংবাদিক মো. আশফাকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার গৃহকর্মী প্রীতি ওরাংকে আটতলার ফ্ল্যাট থেকে নিচে ফেলে হত্যা করেছে। প্রায় একই কায়দায় ছয় মাস আগেও ওই বাসা থেকে আরেক গৃহকর্মীকে ফেলে দিয়েছে। তবে ওই গৃহকর্মী প্রাণে বেঁচে গেলেও এবার রক্ষা হয়নি গৃহকর্মী প্রীতি ওরাংয়ের (১৫)।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রীতির মা। বলেন, ‘আমার সন্তানকে যারা নিষ্ঠুরভাবে বাসা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির নিশ্চিত করতে হবে। আমার সন্তান মৃত্যুর পর আমি বিছানায় ঘুমাতে পারি না। চোখ বন্ধ করলেই আমার সন্তানের লাশ দেখি। আপনারা এখানে যারা আছেন হয়ত সবাই সন্তানের বাবা অথবা মা। আপনারা আমার কষ্টের কথা অনুধাবন করেন। যাতে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হয় এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
সমাবেশে নিহত প্রীতির বড় বোন কবিতা ওরাং বলেন, ‘আমার ছোট বোন জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় এসেছিল। কিন্তু তাকে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। প্রীতির হত্যাকারীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। প্রীতির এই হত্যাকাণ্ড আমরা মেনে নিতে পারি না, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনুন।
প্রতিবাদ সমাবেশে ওরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি এবং বৃহত্তর সিলেটের ওরাংগের সভাপতি পূরণ ওরাং বলেন, ‘প্রীতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাতে মামলা করা না হয় এজন্য বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে। হত্যাকারী আশফাকুল ইসলাম একটি জাতীয় দৈনিকের উচ্চপদস্থ দায়িত্বে আছেন। তিনি এত বড় দায়িত্বে থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হয়ে অমানবিক আচরণ করেছেন। এজন্য আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করতে চাই না, আমরা চাই প্রকৃত হত্যাকারীর বিচার হোক।
তিনি বলেন, আমরা জেনেছি ডেইলি স্টার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধির মাধ্যমে মৌলভীবাজার থেকে প্রীতিকে তার বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে আনা হয়েছে। এর আগেও আশফাকুল ইসলামের বাসা থেকে আরেকজন গৃহকর্মী পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়, সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে প্রীতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার ভাইদের প্রতি অনুরোধ করতে চাই, প্রীতির হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে যেন কোনো অসত্য প্রতিবেদন ছাপাবেন না। প্রীতিকে যেভাবে বিবস্ত্র করে ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে এটা অত্যন্ত অমানবিক। প্রীতির বিচারের দাবিতে গোটা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছে। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা অনুরোধ করব, এই বিচার বিচার যেন বানচাল করা না হয়। যদি উপযুক্ত বিচার না হয় আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
ইমরান/ইএইচ