- বেড়েছে ইফতার সামগ্রীর দাম
- কমেছে ক্রেতা
- জৌলুস হারাচ্ছে ইফতার বাজার
বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের প্রথম দিনে জমজমাট পুরান ঢাকার ইফতার বাজার। চকবাজারের শাহী মসজিদের রাস্তা দু’পাশ জুড়ে বসেছে ইফতারির বাহারি পসরা।
তীব্র যানজট আর গরমকে উপেক্ষা করে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় চকবাজারের শাহী মসজিদে সামনের রাস্তায়। ক্রেতাদের উপস্থিতি আর বিক্রেতাদের হাকডাকে জানান দিচ্ছে পুরান ঢাকা চকবাজারের ঐতিহ্য কতটা স্থান করে নিয়েছে ঢাকাবাসীর কাছে।
সকাল থেকে একের পর এক দোকানি বিভিন্ন খাবারের পসরা নিয়ে বসতে থাকেন। দুপুরের পর থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও ইফতারে ১-২ ঘণ্টা আগে দম ফেলার ফুরসত ছিল না বিক্রেতাদের।
বিক্রেতারা জানান, তেলসহ মাংসের দাম বাড়ি থাকায় ইফতার আইটেমের দামও অনেকটা বেড়েছে। প্রকারভেদে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ইফতারির দাম বেড়েছে।
প্রতি পিস চিকেন মোমো ৩৫ টাকা, বাকনাবা ৪৫ টাকা, কিমা পরোটা ১১০ টাকা, টানা পরোটা ৭০ টাকা, চিকেন সাসলিক ১১০ টাকা, অ্যারাবিয়ান কাবাব ৮০ টাকা, মুঠি কাবাব ৬০ টাকা, হালিম (প্রতি কেজি) ৮০০ টাকা, বটি কাবাব ১২০ টাকা, দই বড়া ২০ টাকা, শাহী জিলাপি (প্রতি কেজি) ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি (প্রতি কেজি) ২০০ টাকা, চিকেন চাপ ১৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকা, টিক্কা ৪০ টাকা, জালি টিক্কা ৫০ টাকা, চিকেন কারি ৭০ টাকা, বিফ কারি ৮০ টাকা, শাহী পরোটা ৬০ টাকা, সাদা পরোটা ৪০ টাকা, সুতি কাবাব (প্রতি কেজি) ১২০০ টাকা, কবুতর রোস্ট ৩৫০ টাকা, খাসির লেগ রোস্ট ১০০০ টাকা, আস্ত চীনা হাঁস রোস্ট ১৫০০ টাকা, আস্ত চিকেন গ্রিল ৪৫০ টাকা, আস্ত পাতি হাঁস ১০০০ টাকা, গরুর সুতি কাবাব (প্রতি কেজি) ১২০০ টাকা, চিকেন পরোটা ৬০ টাকা, বিফ পরোটা ৭০ টাকা, চিকেন রোল ৫০ টাকা, গরুর কাবাব ৫০ টাকা, খাসির জালি কাবাব ৫০ টাকা, ডিম চপ ৪০ টাকা, চিকেন বটি কাবাব ১৫০ টাকা, চিকেন তন্দুরি ২৫০ টাকা, চিকেন লেগ পিস ৫০ টাকা, আলু পরোটা ৩০ টাকা, ঘুগনি (২৫০ গ্রাম) ৩০ টাকা, ঘিয়ে ভাজা জিলাপি (প্রতি কেজি) ৩০০ টাকা, কাশ্মীরি বটি কাবাব (প্রতি কেজি) ১৮০০ টাকা, চিকেন আচারী (প্রতি কেজি) ১০০০ টাকা, গরুর কোপ্তা ২০ টাকা, চিকেন বন ১৫ টাকা, শাহী তন্দুরি ১২০ টাকা, কেশোয়ারী ৪০ টাকা চিকেন কাটলেট ৬০ টাকা, কিমা পরোটা ৬০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ১৫০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ৬০০ টাকা, ছোট পিজ্জা ৫০ টাকা, সবজি নান ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পানীয়ের দিক দিয়ে প্রতি লিটার শরবত-ই মোহাব্বত ২০০ টাকা, মাঠা ১৪০ টাকা, ঘোল ২৫০ টাকা, লাবাং ২০০ টাকা, বোরহানি ১২০ টাকা, পেস্তা বাদামের শরবত ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে প্রতিপিস মালপোয়া ৩০ টাকা, পাটিসাপ্টা ৩০ টাকা, ফালুদা (বক্স) ১১০-২২০ টাকা, ফিরনি (বক্স) ১২০ টাকা, জর্দা (বক্স) ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
প্রতি বছরের মতো এবারও চকবাজারের ইফতারের প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ নামের বিশেষ ইফতারি।
এটি কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এই ইফতার আইটেমটি তৈরিতে মাংস, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ নানা পদ ও মসলার ব্যবহার করা হয়। প্রতিকেজি ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ এর দাম ছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।
বিক্রেতা মাহফুজ আমার সংবাদকে বলেন, আমি প্রতিবছরই ইফতারের পসরা বসাই। সেই জায়গা থেকে আমি এবারও বসিয়েছি। দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশি যাচ্ছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
আরেক বিক্রেতা রবিন বলেন, মসলা ও মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইফতারি আইটেমের দামও বেড়েছে। তবে ক্রেতারা আসছেন, কিনছে। বিকেল পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও শেষ সময়ে বেচাকেনা বেড়ে গেছে।
টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় একটি কাজে এসেছিলেন নাজিব তিনি আমার সংবাদকে বলেন, চকবাজারের ইফতারি সম্পর্কে শুনেছি এটা পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। তাই আমি এখানে এসেছি। দেখতে এবং কিনতে। কিছু খাবারও কিনেছি। প্রথম বার কিনেছি। তাই দামের দিকে তাকাইনি।
এদিকে খাবারে মান ও দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের বিশেষ মনিটরিং টিম।
এদিকে সরেজমিনে বেইলি রোডে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দু-একটি ইফতারি দোকান ছাড়া পাওয়া যায়নি পুরোনো জৌলুস। অবৈধ কোন দোকান বসতে দেওয়া হচ্ছে না। যে দু-একটি দোকান বসেছে তাদেরকেও রাস্তায় বসতে দেওয়া হচ্ছে না।
দোকানিরা বলছেন, গত কয়েকদিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানের কারণে অধিকাংশ দোকান বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া কিছু রেস্টুরেন্টে সংস্কারের কাজ চলায় তারাও দোকান খুলছে না।
এতে স্থানীয় বাসিন্দারা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অন্য বছর আমরা এদিক দিয়ে হাঁটতে পারতাম না তবে এবছর আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজ আমার সংবাদকে জানান, বেইলি রোডের ঘটনার পর থেকে এখানে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসনেরও আছে কড়া নজরদারি। যার কারণে যেনোতেনোভাবে বসতে দেওয়া হচ্ছে না ইফতার বাজার।
তিনি আরও জানান, এর আগের বছরগুলোতে আমরা দেখেছি। উপচে পড়া মানুষের ভিড় থাকত। পায়ে হাঁটার জায়গা পর্যন্ত থাকত না। সেই জায়গায় এ বছর আমরা খুব সহজে যাতায়াত করতে পারছি।
এদিকে যেসব দোকান এখানে বসেছে সেসব দোকানে অভিযান চালিয়েছে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর। বিতরণ করেছে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে জনসচেতনতামূলক লিফলেট।
হামিদ/ইএইচ