স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা

আ’লীগের আদর্শের প্রতীক ছিলেন হাবিবুর রহমান মোল্লা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
আ’লীগের আদর্শের প্রতীক ছিলেন হাবিবুর রহমান মোল্লা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করতে ঢাকা-৫ আসনের প্রয়াত চার বারের এমপি আলহাজ¦ হাবিুবর রহমান মোল্লা। ৭৫এর ১৫ আগস্টে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর অনেকদিন আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে বশীয়ান রাজনীতিবিদ হাবিবুর রহমান মোল্লাকে। তারপর ধীরে ধীরে অবস্থা কিছুটা শিথিল হলে দলের কর্মী সংগ্রহে মাঠে কাজ শুরু করেন রাজধানী ঢাকার মাতুয়াইলের কৃতিসন্তান হাবিবুর রহমান মোল্লা। দলের কেন্দ্রীয় পাটির অফিস পাহারা থেকে শুরু করে সর্বত্রই বিচরণ ছিল তাঁর। এ জন্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে একটু বেশি ভালো বাসতেন। আজকে আমাদের অভিভাবক মোল্লা ভাই নেই। তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের দাবি জানান নেতাকর্মীরা।

সোমবার বিকালে যাত্রাবাড়ির ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার ঢাকা দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কিংবদন্তী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, চার বারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লার ‘প্রয়াণের ৪ বছর’ স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লা স্মৃতি সংসদ, ঢাকা -৫ নির্বাচনী এলাকা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলহাজ¦ মশিউর রহমান মোল্লা এমপি।

স্মরণ সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেছেন, প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লাকে মেরে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছিলেন আওয়ামী লীগ বিরোধী কতিপয় রাজনীতিবিদরা। তবে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বার বার ষড়যন্ত্রের কবল থেকে বেঁচে ফিরেছেন। একসময় পরিবার-পরিজনদের নিয়ে রাজধানীর সুত্রাপুরের বাসায় বসবাস শুরু করেন। এরপরও বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা অনেক চেষ্টা করেছে তাকে মেরে ফেলার জন্য। কিন্তু পারেনি। তার অপরাধ ছিল, ডেমরা-যাত্রাবাড়ি এলাকা ছিল বিএনপি-জামায়াতের ঘাটি। সেই ঘাঁটিকে তিনি ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে পরিণত করেছেন। আজকে ঘরে ঘরে নৌকার কর্মীদের অভাব নেই। এসবই প্রয়াত এমপি আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লার অবদান। শুধু তাই নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরেন, সেইদিনও বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে ঢাকায় বিশাল শোডাউন দেন। দলের দুঃসময়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ কার্যালয়ে দিন-রাত বসে পাহারা দিয়েছেন তিনি। এটা দলের সেই সময়ের অনেক নেতা ভালো করেন জানেন। সবাইকে তাকে সবসময় মোল্লা ভাই বলে সম্বোধন করতেন। তারা আরও বলেন, প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা সবসময় কর্মীদের মধ্যে হিংসা-বিদ্ধেষ দূর করে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এককথায় বলতে গেলে তিনি ছিলেন অহিংস রাজনীতির রূপকার ও গণমানুষের নেতা। ঢাকা ৫ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পরিবারের খবর রাখতেন তিনি। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে সামরিক সরকার থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত সরকারের রোষানলে পড়ে বার বার জেল খেটেছেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। কিন্তু কখনোই তিনি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপস করেননি। তিনি কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন সবসময়। রাজনীতিতে কর্মী তৈরি ও এলাকার উন্নয়নে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

৪৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মো: শরিফ উদ্দিন বলেন, আমাদের সন্তানের মতো ভালো বাসতেন প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা। শুধু তাই নয়, ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকায় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দুর্দিনের নেতা। যাত্রাবাড়ি-ডেমরায় প্রতিটি মানুষকে তিনি অন্তর থেকে ভালো বাসতেন। মোল্লা ভাই রিকশায় চলতেন, পাজেরো বা বড় বড় গাড়িতে চলতেন না। তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ মানুষকে ভালোবাসতেন। রাজনীতি করা অবস্থায় দেখেছি, তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের কাতারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। রাজনীতি করতে গিয়ে বহুবার জেল খেটেছেন। আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শান্তনুর খান শান্ত বলেন, ঢাকা-৫ আসনে মাদক-সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের রাজত্বের পতন ঘটিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাণপ্রিয় নেতা আমাদের মোল্লা ভাই। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কোনো বলয় তৈরি করেননি। তিনি সব সময় বলতেন, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী। আর শেখ হাসিনা আমাদের নেতা। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন, দেখবেন দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ হবে।

আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল এমপি বলেন, প্রয়াত এমপি আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লার আদর্শ ও পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকাকে স্মার্টি হিসেবে গড়ে তুলা হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাজনীতি করতে হলে জনগণকে ভালোবাসতে হবে, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার বাবা এই এলাকার মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করেছেন। সকল কর্মীর জন্য তার দরজা খোলা ছিল সবসময়। আব্বা রাজনীতি করতে গিয়ে অনেকবার জেল খেটেছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনোই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কোনো বিষয়ে আপস করেননি। তিনি বলেন, আমার বাবা এই এলাকার মানুষকে কতটুকু ভালোবাসেন, আপনাদের কথাগুলোই তার প্রমাণ। আমার পিতার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।

সংগঠনের সভাপতি ও ৬৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ মাসুদুর রহমান মোল্লা বাবুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কৌশিক আহমেদ জসিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ারী বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বিপিএম, জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু খন্দকার, মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শান্ত নূর খান শান্ত, ৬৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নুরুল আমিন নীরু, বৃহত্তর ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান মোল্লা, ৬৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. সোহেল খান, ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. শরিফ উদ্দিন ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. জাহিদুল কবির রাজু, ৪৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম নিপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাছান মাহমুদ অপুসহ ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।