‘অনিরাপদ খাদ্যে বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম
‘অনিরাপদ খাদ্যে বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে’

বিশ্বে প্রতিবছর অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে ৬০ কোটি লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) আয়োজিত গবেষণার প্রাক-অবহিতকরণ সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বিএফএসএ’র নিজস্ব কার্যালয়ে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্তৃপক্ষের জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া, বক্তব্য রাখেন কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব।

গবেষণা সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন এন্ড ফুড সাইয়েন্সের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজি ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, নোয়াখালী সায়েন্স এন্ড টেকননোলজি ইউনিভার্সিটির ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.

মো. আবু বিন হাসান সুসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এডভান্সড রিচার্স সায়েন্সের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট ড. এসকে আরিফুল হক, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জিমান মাহমুদ, পথিকৃৎ ইনস্টিটিউট অব হেলথ স্টাডিজের চিফ রিচার্স এসোসিয়েট অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্সের ড. মাহফুজা মোবারক। 

বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, দেশে ৭০ ভাগ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। তারমধ্যে ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু রয়েছে ৪ নম্বরে। তাই আমাদের গবেষণার মাত্রা বাড়াতে হবে। কর্তৃপক্ষের আমাদের গবেষণার সময়সীমা পরিবর্তন করা দরকার, অথচ আমাদের সময় দেওয়া হয় এক বছর। 

ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের ব্যবহারের মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে যে, তা নদী ও সাগরে ছড়িয়ে পড়ছে।  মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্যগুলো নিয়ে গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে।

আলোচকের বক্তব্যে ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, মানুষকে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করাও একটি ইবাদত। ইতিপূর্বে ১৩টি দুধের স্যাম্পলের মধ্যে ১১টিতে হেভি মেটার পাওয়া গিয়েছিল। এটি নিয়ে কাজ করাই তা থেকে উত্তরণ হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ১০টি গবেষণায় অর্থায়ন করা হচ্ছে। আশাকরি দেশের খাদ্য ব্যবস্থায় এটি বড় অবদান রাখবে। স্ট্রিট ফুডগুলোতে নানা ধরনের রং ব্যবহার খাবারকে আকর্ষণ করে তোলা হয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

স্বাগত বক্তব্যে কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ৬০ কোটি লোক অসুস্থ হয়, ৪ কোটি মানুষের  মৃত্যু হয়। বিশ্বে বছরে ৪০ শতাংশ শিশু রোগাকান্ত হয় ও ১ লাখ ২৫ হাজারেন মৃত্যু হয়।

ড. শারমিন রুমি আমিন বলেন, আমাদের সাধারণ মানুষের তথা নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাত্রা এতো বেশি যে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এক রোগের ওষুধ খেলে অন্যান্য রোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। 

ড. এসকে আরিফুল হক বলেন, স্কুলের সামনে বিক্রি হওয়া আচার, ফুসকাসহ শিশুরা যে ধরনের খাবার খায় সেসব থেকে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়।

ড. মো. আব্দুল মাসুম বলেন, দেশে পশু মোটা-তাজাকরণে স্ট্রয়েট ড্রাগ ব্যবহার হচ্ছে না বলা হলেও কিন্তু খামারিরা এটি ব্যবহার করছে। খামারিরা প্রথমে স্বীকার না করলেও পরবর্তীতে তারা জানায় তারা হলুদ বা গোলাপী বড়ি নামে ব্যবহার করে। আর এসব ড্রাগ সীমান্ত এলাকায় বেশি ব্যবহার হয়। কেননা ভারত থেকে এগুলো সহজেই পাচার হয়ে দেশে আসে। তিনি বলেন, আমরা পশুর রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা করে স্ট্রয়েড ব্যবহারটা তুলে ধরবো।

ড. মো. হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিটষ্ঠানের আশপাশে ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের দোকান বেশি। শিক্ষার্থীদের ২৫ শতাংশ ফাস্ট ফুড খায়। তারমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের খাবার বেশি খায়। এসব তৈলাক্ত খাবারে জিহ্বায় আলাদা স্বাদ জমে। তাতে  করে এসব খাবারের প্রতিবেশি আকর্ষিত হয়। তখন অন্য খাবার ভালো লাগে না৷

সেমিনারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

বিআরইউ