‘তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা জরুরি‍‍’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৬:০৬ পিএম
‘তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা জরুরি‍‍’

প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সর্ববৃহৎ কারণ তামাক। তামাকের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তামাকের আর্থ-সামাজিক, পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ক্ষতিও ব্যাপক। তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষয়ক্ষতি রোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ, জোরালো কর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কোম্পানির কূটকৌশল সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান- প্রজ্ঞা  আয়োজিত ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি "তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যম” শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় এমন আহ্বান করা হয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে বলে কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করে, পঙ্গুত্ব বরণ করে আরো কয়েক লক্ষ মানুষ। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফল অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একইসময়ে এই খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি) চেয়ে অনেক বেশি। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং পরিবেশের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকি সৃষ্টি করছে।

কর্মশালায় আরো জানানো হয়, তামাক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের কোন বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত আইনের খসড়া সংশোধনীতে সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বিলুপ্তকরণ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধকরণ, ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এধরনের সকল পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোম্পানির প্রভাবমুক্ত থেকে খসড়াটি দ্রুত পাসের আহ্বান জানানো হয়।

তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি বলে কর্মশালায় জানানো হয়। বাংলাদেশে তামাক কর কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ এবং তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য। সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সব ধরনের তামাকপণ্যের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া এবং সিগারেটের মূল্যস্তর পর্যায়ক্রমে ৪টি থেকে কমিয়ে ১টিতে আনার আহ্বান জানানো হয় কর্মশালায়।প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৭জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।

দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিসিআইসি-এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, আত্মা’র কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী, এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

আরএস