নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গ্রামীণ মাটির রাস্তা সমূহ টেকসইকরণ (এইচবিবি) কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী নীতিমালা না মেনে কাজ করায় সড়ক নির্মাণের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাথায় সড়ক ধসে গেছে।
এরফলে সড়কগুলোর স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ন ২ প্রকল্প সংলগ্ন স্থানে প্রায় ৩শ মিটার সড়ক পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে গ্রামীণ মাটির রাস্তা সমূহ টেকসইকরনের লক্ষে বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ন ২ প্রকল্প হতে ক্যানেল হয়ে উত্তর দুরাকুটি ২৭ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক হাজার মিটার রাস্তা এইচবিবিকরনে বরাদ্দ ধরা হয় ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
মাগুড়া ইউনিয়নের পুর্বপাড়া হতে বাংলাবাজার অভিমুখে ৫০০ মিটার এবং পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া হতে কালিকাপুর মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অভিমুখে ৫০০ মিটার সহ মোট এক হাজার মিটার সড়ক এইচবিবিকরনের জন্য ৫২ লাখ ৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দুটি পান কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্টান মেসার্স নোমান এন্টার প্রাইজ এবং নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মেসার্স সিনান ট্রেডার্স। গত মে মাসের ১৯ তারিখে সড়ক নির্মান কাজের শুভ উদ্ধোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ন ২ প্রকল্প সংলগ্ন সড়কটির এইচবিবিকরন কাজ চলমান রয়েছে। সড়কটির নির্মাণ কাজের সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক একজন তদারকি কর্মকর্তা থাকার নিয়ম থাকলে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা মাসুদরানা, রবিউল ইসলাম, সাজ্জাদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সড়কটির নির্মাণ কাজে কোনো তদারকি কর্মকর্তা না থাকায় ঠিকাদার তড়িঘরি করে সড়কটির বক্স কাটিং করে দু থেকে তিন ইঞ্চি গেফ রেখে সড়কের সলিং বিছিয়ে খুব তাড়াতাড়ি এইচবিবিকরন কাজ করছেন। সড়কের সলিং করার আগে সঠিকভাবে সড়কটির মজবুতিকরন করার কথা কিন্তু ঠিকাদার তা করছেননা। এরফলে সড়কটি নির্মাণ শেষ হতে না হতেই বেশ কয়েকটি জায়গায় ধসে গেছে। তাছাড়া সড়কটির নির্মাণ কাজে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাগুড়া ইউনিয়নের পুর্বপাড়া হতে বাংলাবাজার অভিমুখে সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এসময় দেখা যায় সড়কটির নির্মাণের ১০ থেকে ১৫ দিনের মাঝে সড়কের ১০ থেকে ১৫টি জায়গায় ধস নেমেছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আনিছুল ইসলাম ও আকবর হোসেন বলেন, সড়কটি নির্মাণের সময় বালু দিয়ে সঠিকভাবে মজবুতিকরণ না করার ফলে নির্মাণের কয়েকদিনের মাথায় বিভিন্ন জায়গায় ধসে গেছে। এছাড়াও সড়কটিতে নিম্মমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া সড়কের গিয়ে দেখা যায়, গত ২৯-৫-২০২২ ইং তারিখের মধ্যে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করার নির্দেশ থাকলেও ঠিকাদার সড়কটি খুরে রেখেই দায় সেরেছেন। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কে হাঁটু পরিমান কাঁদাপানি জমে সড়কটি চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ওই সড়কটি সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি বলেন টিআরের বরাদ্দের টাকায় আমি সড়কের দুইপাশে মাটি ফেলেছি।
তিনি আরো বলেন, জলঢাকা উপজেলার জিকরুল হক জিকো নামে এক ঠিকাদার সড়কটি খুরে রেখে চলে গেছেন। একই সড়কে কিভাবে দুইটি বরাদ্দ হল জানতে চাইলে ওই ইউপি সদস্য বলেন, এটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিষয় আমি কিভাবে বলব।
বাহাগিলি ইউনিয়নের আশ্রয়ণ ২ প্রকল্প সংলগ্ন সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মেসার্স সিনান ট্রেডার্সের মালিক বাবুর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কাজটি আমি করছি না। কিশোরগঞ্জ উপজেলার রতন নামে একজনের কাছে কাজটি বিক্রি করে দিয়েছি।
রতন মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে।
মাগুড়া বাংলাবাজার এবং পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদার জিকরুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সরকারী নীতিমালা মোতাবেক মাগুড়া ইউনিয়নের বাংবাজার সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি।
পুটিমারী ইউনিয়নের সড়কের কাজ এখোনো শুরু করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন , এ বিষয়ে আপনারা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল হাসনাত সরকারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বাহাগিলি ইউনিয়নের ৩ শ মিটার সড়ক নির্মাণ কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। ওই অংশটুকুতে পুনরায় কাজ করানো হবে।
মাগুড়া বাংলাবাজার এবং পুটিমারী শাহপাড়া সড়কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব তাড়াতাড়ি সড়কটির কাজ শুরু করা হবে। একই সড়কে কিভাবে দুইটি বরাদ্দ দিলেন প্রশ্ন করলে তিনি এর কোন সদুত্তর দেননি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকী বললে বলেন, বাহাগিলি ইউনিয়নের ৩শ মিটার সড়ক পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছি। বাকিগুলো পরিদর্শনপূর্বক কোন অনিয়ম পেলে বিল দেয়া হবে না।
পুটিমারী ইউনিয়নের শাহপাড়া সড়কটিতে একই অর্থবছরে কিভাবে দুইটি বরাদ্দ হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমারসংবাদ/এআই