লক্ষ্মীপুরে টাকা ছিনতাইয়ের জন্য বন্ধুকে হত্যার ঘটনার মামলায় মো. বাহার নামে এক যুবকের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ৭০০ পিস ইয়াবা রাখার দায়ে রহমত উল্যা নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
একই মামলায় আসামি ফয়সাল পাঠানকে বেকসুর খালাসের আদেশ দেন আদালত। এছাড়া ৮৭ পিস ইয়াবা রাখার দায়ে মাহবুব আলমকে ৭ বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
সোমবার (২৭ জুন) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম পৃথক এই ৩টি মামলায় এ রায় প্রদান করেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌসুলি (পিপি) এ্যাড. জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বাহার ও মাদক মামলার আসামি রহমত উল্যা পলাতক রয়েছেন। মাদক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত মাহবুব আলম রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বাহার সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের বড়বল্লভপুর গ্রামের জয়নাল আবেদিন খন্দকারের ছেলে। মাদক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত মাহবুব সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে ও রহমত উল্যা রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বাহার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। বাহার ও ভিকটিম আবদুর রব রাসেল বন্ধু ছিলেন। রাসেলের বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। এতে ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতে নিজ বাড়ি থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পাশ্ববর্তী চরমোহাম্মদপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে হেটেই রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে বসুদুহিতা গ্রামে পৌঁছলে বাহার পেছন থেকে লোহার চার্জার লাইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। এতে রাসেল অচেতন হয়ে পড়ে যায়। তাকে মৃত ভেবে টাকা নিয়ে বাহার পালিয়ে যায়।
পরদিন সকালে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় ২ মাস সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে ২৫ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ নেয়ার পথে বাহার মারা যান।
এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি চন্দ্রগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত বাহারের মা আমেনা বেগমের লিখিত অভিযোগটি পরবর্তীতে হত্যা মামলায় রুজু হয়। তদন্ত শেষে ওই মামলায় বাহারের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ উপ-পরিদর্শক পুষ্প বরণ চাকমা ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত বাহারের অনুপস্থিতিতে রায় দেন।
এদিকে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে র্যাব-১১ এর টহল টিম সদর উপজেলার পালেরহাট এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী মাহবুবকে ৮৭ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন। একইদিন র্যাব-১১ লক্ষ্মীপুর ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মো. মিরাজ উদ্দিন বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন।
৩০ সেপ্টেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল আলীম আদালতে মাহবুবের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত তাকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয়।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের ২৩ জুন রামগঞ্জ থানার এসআই পঙ্কজ কুমার সাহা ফোর্স নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে টহল দিচ্ছিলেন। এসময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার উত্তর শ্রীরামপুর গ্রাম থেকে ৭০০ পিস ইয়াবাসহ রহমত উল্যাকে আটক করা হয়। একইদিন এসআই পঙ্কজ কুমার সাহা বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরদিন তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
একই বছর ১৪ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুহাম্মদ কাওসারুজ্জামান তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত তাকে ১৫ বছর কারাদণ্ড প্রদান করেন। একই মামলায় আসামি ফয়সাল পাঠানকে বেকসুর খালাসের আদেশ দেন আদালত।