দুমকিতে এতিমের লাখ লাখ টাকা লোপাট!

মোঃ জসিম উদ্দিন, দুমকি (পটুয়াখালী) প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২, ০৩:৪৪ পিএম
দুমকিতে এতিমের লাখ লাখ টাকা লোপাট!

পটুয়াখালীর দুমকিতে ভুয়া এতিমের তালিকা দেখিয়ে ৬টি এতিম খানা ও শিশুসদনে গত বছরে (জুলাই- ডিসেম্বর) ৬ মাসের ক্যাপিটেশন গ্রান্টের অন্ততঃ ১৬ লক্ষাধিক টাকা লোপাট করা হয়েছে। 

এতিম খানা ও শিশু সদনগুলোর পরিচালক ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তার যোগসাজসে ভুয়া এতিমের তালিকার বিপরীতে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন ও লোপাট করা হয়েছে। বাস্তবে ৬টি এতিমখানা ও শিশুসদনের মধ্যে ৩টি এতিমখানাই শূন্য। 

গত সোমবার ও মঙ্গলবার সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্যের বাস্তব চিত্র পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন, ভুয়া এতিম দেখিয়ে বরাদ্দ লোপাটের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য মতে, পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় সরকারি ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত ৬টি এতিমখানা রয়েছে। শিশুসদনগুলো হচ্ছে, আঙ্গারিয়া ছালেহিয়া শিশু সদন, আলগী মোহাম্মাদিয়া শিশু সদন, পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া শিশু সদন, মুরাদিয়া আছিয়া খালেক শিশু সদন, আঙ্গারিয়া হাজী হাতেম আলী এতিম খানা ও শিশু সদন ও কার্ত্তিপাশা মাওলানা আবদুল গণি শিশু সদন। 

এসব শিশু সদনে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দের আওতায় এতিম দেখানো হয়েছে ১৩৮ জন। ক্যাপিটেশন বরাদ্দের অনুকূলে এতিমখানার ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী পিতৃ-মাতৃহীন মোট দরিদ্র শিশুর ৫০ শতাংশ বরাদ্দ পাওয়ার বিধান রয়েছে। প্রতি মাসে প্রত্যেক এতিম শিশুর মাথাপিছু দুই হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৬ মাসে ১২ হাজার করে বছরে দু'বারে মোট ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে খাবার বাবদ দেয়া হয় এক হাজার ৬শ' টাকা, পোশাকের জন্য ২শ' টাকা, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদও সমান বরাদ্দ দেয়া হয়। 

উপজেলায় ২০/২১ অর্থবছরে ৬টি শিশু সদনে মোট ১শ' ৩৮ জন এতিমের জন্য ৩৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রথম কিস্তিতে ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত ৬টি এতিমখানায় দেয়া হয়েছে। উপজেলার পূর্ব কার্তিকপাশা মাওলানা মোঃ আব্দুল গনি শিশু সদনটিতে কাগজে-কলমে ১৪ জন এতিম দেখানো হয়েছে। কিন্তু রোববার সেখানে গিয়ে একজন এতিমেরও দেখা মেলেনি। শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো রান্না ও হয়নি। নেই কোনো বাবুর্চিও।

স্থানীয় জনৈক ব্যক্তি উপহাসের ছলে বলেন, গনি হুজুরে মারা যাওয়ায় তার সন্তানেরা এতিম। তাই এতিমের কোঠায় তার ছেলে টাকাগুলো নিতে পারেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজনে বলেন, গত কয়েক বছরে এখানে আমরা কোনো এতিম শিশুকে থাকতে দেখিনি। 

শিশু সদনের পরিচালক মাওলানা মোঃ নেছার উদ্দিন বলেন, একটু সমস্যায় থাকার কারণে আপাতত এতিমখানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে তবে শিগগিরই চালু করা হবে।

মুরাদিয়ার আছিয়া খালেক ইসলামিয়া শিশু সদনে গিয়ে মিললো একই চিত্র। তবে একেবারে শুন্য নয় কাগজে-কলমে ১৭ জন এতিম থাকলেও বাস্তবে ২ জনের দেখা মিলেছে। অনুপস্থিত ১৫ জন এতিম কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে এতিমখানার পরিচালক মাওলানা মোঃ আব্দুস সালাম কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। দুমকি হাজী হাতেমআলী এতিমখানা শিশু সদনের তালিকায় ১২ জন এতিম দেখানো হয়েছে, বাস্তবে একজন এতিমেরও দেখা মেলেনি।

এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আসলাম অকপটে স্বীকার করে বলেন, অন্যান্যদের দেখাদেখি তিনিও ১২ জনের তালিকা দিয়েছেন। পাঙ্গাশিয়া নেছারিয়া শিশু সদনের তালিকায় ২০ জন এতিম দেখানো হলেও বাস্তবে আছে মাত্র ৪ জন। এছাড়াও আলগী মোহাম্মাদিয়া শিশু সনদ ও আঙ্গারিয়া ছালেহিয়া শিশু সদনেও তালিকা অনুযায়ী এতিম পাওয়া যায়নি। 

দুমকি সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ জুনায়েদ ইবনে আজিজ বলেন, এতিমদের হিসেবে গড়মিল থাকায় বর্তমান ভাতা বন্ধ রয়েছে এবং এর আগে এতিম ছিলো তাই তারা ভাতা গ্রহণ করেছে। 

দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল ইমরান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ইতোমধ্যে ভাতা বন্ধ রয়েছে এবং ভুয়া তালিকার তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

আমারসংবাদ/এআই