মাত্র ২৮ বছর বয়সে ফ্রিল্যান্সিং করেই কোটিপতি বনে গেছেন নাঈম । ফ্রিল্যান্সিং এর উপার্জন দিয়ে বোনদের বিবাহ দেয়া ও পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। তার বাড়ি নলছিটি উপজেলার রানাপাশা গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নাঈম নলছিটির রানাপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি ও ঝালকাঠি সরকারি কলেজ থেকে এসএইচসি পাশ করেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে।
তিনি মুঠোফোনে বলেন, অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করি ২০১৬ সালে কাজ শুরু করার প্রথম মাসে আমি আয় করেছিলাম প্রায় ৬ হাজার টাকা। এটা তখন আমার কাছে অনেক বড় একটা পাওয়া ছিল। কারণ আমি ভেবেছিলাম আমার অনলাইনে কাজ করতে হবে।
প্রথমে এই ভেবে ভয় হচ্ছিল যে, আমার ক্লাইন্ট থাকে বাহিরের দেশে। কাজ করার পর টাকা দিবে কিনা। কাজ শেষ করার পর যখন হাতে টাকা পেলাম তখন বুঝলাম না আসলে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করা সম্ভব। প্রথম বছরেই প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা আয় করি।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় লক্ষ্য করতাম বিকেল হলে সবাই বিসিএস কোচিংয়ে দৌঁড়ায়। আবার কেউ সরকারি চাকরির পিছনে দৌঁড়াচ্ছে। তখন আমি ভাবলাম ‘সবাই যদি চাকরি করি, তাহলে চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করবে কে?’ গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর আমার চায়নাতে স্কলারশিপ হয়।
কিন্তু আমি পরিবারের বড় ছেলে তাই পরিবার আর বিদেশে পাড়ি জমাতে দিলো না। তাই তখন আমি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উপর ছয় মাসের একটি কোর্স করে আপওয়ার্কে নিজের নামে একটি একাউন্ট খুলি। ওই কোর্স শেষে আমি একটা প্রোজেক্ট পাই। ওই প্রোজেক্ট এর জন্য আমাকে ১০ ডলার দেয়। এটা শেষ করার কয়েক সপ্তাহ পরই আরেকটি প্রোজেক্ট পাই যার জন্য আমাকে ৫০ ডলার দেয়। ২০১৭ সালের আমার এমবিএ শুরু হয়ে যায়।
এমবিএ শুরু হওয়ার পর আর কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না। কার্তিক নামে একজন আমার সঙ্গে কোর্স শিখেছিলো। তার সঙ্গে একদিন যোগাযোগ করে জানতে পারলাম যে, ও কোনো কাজ পাচ্ছে না। ও ইংলিশে বেশি দক্ষ ছিল না তাই ক্লাইন্টদের ঠিকমতো ডিল করতে পারতো না। তাই কাজ পেত না। তখন আমি বললাম আমার সঙ্গে চাইলে তুমি কাজ করতে পারো।
আমি যা খাই, তুমিও তাই খাবে। যেখানে থাকি তুমিও সেখানেই থাকবে। আমার এই কথায় সে রাজি হলো। আমি শহরে এক রুম নিয়ে থাকতাম কার্তিককে আমার কাছে নিয়ে আসি। তখন কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না। কাজ ছিল না, হাতে টাকাও ছিল না। উপার্জন যা করেছিলাম তা দিয়ে বোনদের বিবাহ ও সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়লাম।
তখন এক বেলা খেতাম। এভাবে করে প্রায় ২-৩ মাস চলে যায়। রোজার মাস চলে আসলো। ঈদের ঠিক একদিন আগে ১২০ ডলারের একটি প্রোজেক্ট পাই। প্রোজেক্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি কার্তিককে ফোন দেই বরিশালে চলে আসার জন্য।
ঈদের দিন বিকালে আমরা দুজনেই বরিশালে চলে আসি। পরবর্তীতে ওই একই কোম্পানি আমাকে ১২০ ডলারের প্রোজেক্ট দেয়। আমি ২০১৭ সালের প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা আয় করি । ২০১৮ সালে আমার এমবিএ শেষ হয়ে যায়। এই যে আমি উপরে উঠতে শুরু করলাম, এরপর আমাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি ।
বর্তমানে নাঈম একাধিক প্লাটফর্মে ক্লাইন্ডদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার পাশাপাশি ২০১৯ সালে নিজে গড়ে তুলেছেন ‘নিকেট’ নামে একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার। এই প্রশিক্ষণ সেন্টারে ২০১৯ সালে থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০টি ব্যাচ প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়েছে। যারা সকলেই ফ্রিল্যান্সিং করে বর্তমানে প্রতিমাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন।
ফ্রিল্যান্সারে তরুণ উদ্যোক্তা নাঈম সমাজের শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে উপার্জনের বিভিন্ন কোর্স করে আয় করার আহ্বান জানান। অনলাইনে কাজের অভাব নেই। কাজের দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমেও শেখান।
আমারসংবাদ/টি এইচ