শিক্ষকের গলায় জুতার মালা, আ.লীগ সভাপতিকে অব্যাহতি

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২২, ০৪:২৫ পিএম
শিক্ষকের গলায় জুতার মালা, আ.লীগ সভাপতিকে অব্যাহতি
মো. আকতার হোসেন

নড়াইলের মীর্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মীর্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. আকতার হোসেনকে সভাপতি পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে সহ-সভাপতি মশিয়ার রহমানকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
 
এছাড়া এ ঘটনায় মো. আকতার হোসেনকে তিন দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. ওমর ফারুক এ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। 

নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুন মীর্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রী কলেজের এক ছাত্রের মোবাইলে ষ্ট্যাটাস নিয়ে এক সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। আপনি উক্ত কলেজের একজন শিক্ষক ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরিশেষে দেখা যায় আপনার উপস্থিতিতে উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে বের করে আনা হয়। 

যাহা নিন্দনীয়, শিক্ষক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার সামিল। বিভিন্ন প্রকার পত্র-পত্রিকায় ও মিডিয়ায় আপনাকে জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। যার দায় আপনি এড়াইতে পারেন না। আমরা মনে করি সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। 

উক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সভাপতির অবর্তমানে সহ সভাপতি মশিয়ার রহমান এ দায়িত্ব পালন করবেন। 

এদিকে, জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দেওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে শনিবার (২ জুলাই) নির্ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুবায়ের হোসেন চৌধুরী। অন্যদিকে নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত জেলা পুলিশের তদন্ত টিমের প্রতিবেদনও শনিবার নির্ধারণ করেছে।  

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট মুছেনি রাহুল। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। 

এসময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সামনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে কলেজ চত্বরে ঘোরানো হয়।

আমারসংবাদ/এআই