কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন এলাকায় জঙ্গি হামলার ৬ বছর। ২০১৬ সালে এ দিন (৭ জুলাই) শোলাকিয়া ঈদগাহের অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে জঙ্গি হামলা করে নব্য জেএমবির সদস্যরা।
এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় বিচারিক আদালতে পাঁচ জঙ্গি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাজিব গান্ধী, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, আনোয়ার হোসেন ও জাহিদুল হক তানিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
জঙ্গি মিজান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর উপজেলার হাজারদিঘা গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে, রাজিব গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম রাঘবপুর ভূতমারা গ্রামের মৃত মাওলানা ওসমান গণির ছেলে, সোহেল মাহফুজ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর সাদপুর কাতলিপাড়া গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে, আনোয়ার গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পান্থাপাড়া গ্রামের মৃত হাকিম উদ্দিন আকন্দের ছেলে এবং তানিম কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
এরআগে ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিচারিক আদালতে পুলিশ শোলাকিয়ার হামলা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। এ জঙ্গি হামলায় ২৪ জনের সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ১৯ জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় অভিযোগপত্রে আসামির তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সিরিয়া, সৌদি আরব ও পাকিস্তান থেকে হুন্ডির মাধ্যমে শোলাকিয়া হামলায় খরচের যাবতীয় টাকা আসে। জঙ্গি বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ওই টাকা নারায়ণগঞ্জে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীর কাছে পৌঁছে দেয়।
এছাড়াও ভারত থেকে আসে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। বড় মিজানের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জে তামিম চৌধুরীর কাছে সেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ পৌঁছে দেয় জঙ্গি নুরুল ইসলাম মারজান।
শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার বিষয়ে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার কাছে জঙ্গি মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে সুজনের ভাড়া বাসায় একটি বৈঠক হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২৪ জুন রাজধানীতে তানভীর কাদেরীর বাসায় আবার পরিকল্পনা হয়। এ পরিকল্পনায় রাজিব গান্ধী, তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকলেট, তানভীর কাদেরী, খাইরুল ইসলাম ওরফে বাঁধন ওরফে পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিমল ওরফে নাহিদ, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামীহ মোবাশ্বের ও মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তী সময়ে হামলার তিনদিন আগে ৪ জুলাই তিন জঙ্গি নুরুল ইসলাম মারজান, সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ও রাজিব গান্ধী মিরপুরে শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় আরও একটি পরিকল্পনা সভা করে। ওই সভায় শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদকে হত্যা করা হবে-মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) জাহিদ, ফরিদুল ইসলাম আকাশ, আবির রহমান, শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ও জাহিদুল হক তানিম কিশোরগঞ্জ শহরের নীলগঞ্জ রোড এলাকার ভাড়া বাসায় অবস্থান করেন। এরপর ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে শোলাকিয়ার ইমামকে হত্যা করার জন্য জঙ্গি আবির রহমান ও শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলামকে অপারেশনে পাঠিয়ে তামিম আহমেদ চৌধুরী, জাহিদ ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ কিশোরগঞ্জ ছেড়ে চলে যায়। জঙ্গি আবির ও শরীফুল হামলার প্রস্তুতি নিয়ে সকাল পৌনে ৯টার দিকে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির মুখে পড়ে চাপাতি, বোমা ও পিস্তল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এসময় হামলায় চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যসহ ১৪ পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কনস্টেবল জহিরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এছাড়াও কনস্টেবল আনসারুল হককে ময়মনসিংহ সিএমএইচে নেওয়ার পর ওই দিনই দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
জঙ্গি হামলার পরপরই হামলাকারী জঙ্গিদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ ও র্যাব। অভিযানে জঙ্গি আবির রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জঙ্গি আবিরের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। এছাড়াও পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলির সময় শোলাকিয়ার সবুজবাগের নিজ বাসায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝর্ণা রাণী ভৌমিক নামে এক গৃহবধূ মারা যান। ওই সময় র্যাবের হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অপর জঙ্গি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকার শফিউল ইসলাম ধরা পড়ে। এসময় কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম নামে এক যুবকও আটক হয়। পরবর্তী সময়ে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শফিউল মারা যায়।
কেএস