উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহৎ পশুরহাট চাঁচকৈড়। নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা সব চেয়ে বড় হাট। সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এই হাট। শুধুমাত্র মঙ্গলবার হাটে গরু মহিষ ও ছাগল ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে। ঈদুল আজহার গরু কেনাবেচার শেষ হাট আজ।
চাঁচকৈড় শাহ পাড়া মসজিদ থেকে শুরু হয়ে ব্রিজ দিয়ে পর্ব দিকে খলিফা পাড়া ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে ওই পশুর হাট। পশুর হাট জমজমাট হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না গরুর মালিক ও খামারিরা।
পশুর খাবারের দাম শ্রমিকের মজুরী বৈরী আবহাওয়া, বন্যা, দ্রব্যমূল্যেও ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই কোরবানির সংখ্যা কমেছে তার ওপরে আবার কোরবানির প্রায় দ্বিগুন গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এ কারণে বাজার ভর্তি পশু থাকলেও ক্রেতার অভাবে দাম না পাওয়ায় গরু নিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে অনেকেই।
মঙ্গলবার (৫ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, হাটে গরু ছাগলের আমদানি বেশি থাকলেও ক্রেতা কম থাকায় বেচাবিক্রী নেই বললেই চলে। ফলে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানি পশু। দামের সুবিধা পাওয়ায় গরু কিনে ক্রেতারা খুশি হলেও সারা বছর পালন করে প্রত্যাশার মতো বিক্রয়মূল্য না পাওয়ায় মন খারাপ বিক্রেতাদের।
হাটে তিল পরিমান ঠাঁই নেই। স্বাস্থ্যবিধি বা সামজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। নেই কোন করোনা প্রতিরোধে সুরক্ষা সামগ্রী। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসানোর কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
গরুর খামারী মোলেব হোসেন জানান, তিনি ১০টি গরু নিয়ে এসছেন হাটে বিক্রি করতে। এর মধ্যে দুটি গরু বিক্রি করেছেন মাত্র। সেখানেও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম গড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কম। এতে ক্রেতাদের খুশি হতে দেখা গেলেও বিক্রেতারা খুশি হতে পারছেন না।
তাড়াশ উপজেলার কাটাবাড়ি গ্রামের কৃষক রাজু মন্ডল জানান, তিনি তার একটি ষাঁড় ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তবে তার আশা ছিল ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করার।
তিনি আরো বলেন কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে খামারীরা আছেন শঙ্কায় আর দুঃশ্চিন্তায়।
উপজেলার সাবগাড়ি গ্রামের গরু ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, সাত জন মিলে কোরবানী করছি এবার ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় একটা গরু কিনবো। মাত্র ৯৮ হাজার টাকায় একটা গরু কিনলাম। মুখে হাসি দিয়ে বললেন ভালোই হয়েছে গরুটি। এবার তুলনামুলক ভাবে গরুর দাম কম।
খামারী সালাম, নাজমুল,জালাল ও তানিম জানান, প্রতিবছর ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে থেকেই ঢাকার ব্যাবসায়ীরা খামার ও গরু মালিকের বাড়ি বাড়ি এসে দাম দর করে গরু কিনেন। এ বছর সেই কেনা বেচা নাই।
গুরুদাসপুর হাট এজারাদার মোঃ আনিসুর রহমান মোল্লা জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার গরু এবং ১০হাজারের মতো ছাগল হাটে আসলেও ২৫ থেকে ৩০ পাসেন্ট গরু-ছাগল বিক্রী হয়েছে। বাকি সব ফেরত গেছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন বলেন, এ বছর পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসানোর জন্য ইজারাদারদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়া পশুর হাটকে নজরদারীতে রাখা হয়েছে।
আমারসংবাদ/এআই