ফেনীতে ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি নেই। সূর্যের প্রখর রোদের গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। তীব্র গরমে পুড়ছে জনপদ, মাঠ-ঘাট ও ফসলী জমি। সকাল পেরিয়ে দুপুর না গড়াতেই সড়কে কমছে মানুষের চলাচল। তৃষ্ণা মেটাতে অনেকে ভিড় করছেন ভ্রাম্যমাণ শরবত ও আখের রস দোকানে।
এদিকে অস্বাভাবিক তাপদাহে অধিকাংশ ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি সহ বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। গত কয়েকদিন ফেনীতে গড়ে তাপমাত্রা ছিলো ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তা বেড়ে গত বৃহস্পতিবার ৩৬.৫ ডিগ্রিতে পৌঁছায়। চলতি বছরের মধ্যে এটি জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টি না হলে গরম কমার সম্ভাবনা নেই।
রোববার (১৭ জুলাই) শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকেই রোদের প্রখরতায় ত্রাহি অবস্থা নগরবাসীর। মাথার উপরে রোদের প্রচন্ড তাপ ও ভ্যাপসা গরমে ওষ্ঠাগত জীবন।
মাঝে মধ্যে সূর্য মেঘে ঢাকা পড়লেও গরমের তীব্রতা কমছে না। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের তাপদাহ অনেক তীব্র হওয়ায় হাঁসফাঁস অবস্থা সবার মাঝে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বৃদ্ধ ও কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।
ফেনী সিটি গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষার্থী সুবহা রহমান জিদনী ও সামিহা রহমান জিম জানায়, প্রচণ্ড গরমে তাদের স্কুলের টিনশেডের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা অনেক কষ্টসাধ্য। গরমে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
ট্রাংক রোড ও মহিপালে কয়েকজন রিকশা চালক বলেন, ‘গরমে রাস্তাত বাইর অন যায় না। তবুও পেটের দায়ে বাইর অইলাম। রিকশা চালাতে গিয়ে বারবার গলা শুকাই যায়। এ গরম ক'দিন থাকে আল্লাহ জানে।’
পাঠান বাড়ী রোডের মাথায় বরিশালের ডাব বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হাওলাদার জানান, গরম বাড়ায় ডাবের চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। তবে প্রয়োজন অনুপাতে সরবরাহ কম থাকায় প্রতিপিস ডাব ২০-৩০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এক সময় ৪০-৫০ টাকায় ডাব বিক্রি করলেও এখন সেটি বিক্রি করতে হয় দ্বিগুণ দামে।
ফুলগাজী উপজেলার নোয়াপুর গ্রামের আবুল হোসেন বাবুল নামে এক কৃষক জানান, এ বছর গরমে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি। প্রচন্ড তাপের কারণে ফসলের মাঠে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না।
এদিকে গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ ঠিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফেনী বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগকে। শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও গ্রামে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং। এতে অসহনীয় কষ্টে দিনাতিপাত করছেন মানুষজন।
গত কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরমে ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় সিটের বিপরীতে এখানে তিনগুণ বেশি ভর্তি রয়েছে।
হাসপাতালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। গরমে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে ফুটানো পানি ব্যবহার, গরম থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে গোসল না করা এবং রাস্তার পাশের বিভিন্ন শরবত ও আখের রস না খাওয়ায় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আমারসংবাদ/এআই