মিঠাপুকুর উপজেলার ০২ নং- রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদিপুকুর ব্লেজ-চার্জের পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলসহ নানাবিধ অভিযোগ তুলেছেন এক শিক্ষার্থী। ঐ শিক্ষার্থী ঐ চার্জের পরিচালকের অধিনে কর্মরত ছিলো। এ ঘটনায় প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদে পরে মিঠাপুকুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ব্লেজ- চার্জের ঐ-পরিচালকের নাম প্রদীপ কুজুর। তিনি চার্জটির সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন।
অভিযোগকারী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বলদিপুকুর মিস্ত্রি পাড়ায় ব্লেজ-চার্জ নামে একটি সংস্হা আদিবাসীদের ধর্মীয়, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে কাজ করছিলো। কিন্তু চার্জের পরিচালক প্রদীপ তার সহকর্মী ঐ ছাত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে নানা সময়ে প্রেম নিবেদনসহ কুপ্রস্তাব,যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করতো। ঐ ছাত্রী এতে সাড়া না দিলে তাকে বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক শ্রীলতাহানি ও যৌন হয়রানি করতেন। এমনকি ঐ ছাত্রীকে চরিত্রহীনার অপবাদ দিয়ে চাকরিচ্যুত করেন, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয় ও হুমকিধামকি দিতেন।
এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর আদিবাসী নেতারা বিভিন্ন সময়ে চার্জের পরিচালক প্রদীপকে সতর্ক এবং তাদের সমাজে মিমাংসার চেষ্টা করতে চাইলে প্রদীপ বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং ঐ ছাত্রীর উপর নানাবিধ অপবাদ রটান। পরে ঐ ছাত্রী বাদী হয়ে প্রথমে ০২ নং রানীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে সার্লিশ দেন এবং সেখানে বিচার না পেয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে, অভিযুক্ত প্রদীপ স্হানীয় জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান, মেম্বারের সহযোগিতায় গত- ২৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে উক্ত বিষয়টি (৭০) হাজার টাকায় ইউপি-চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং টাউটদের দিয়ে ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে মিমাংষা করেন। এবং জরিমানার ৭০/ হাজার টাকা তিনমাস পর ভিকটিমের পরিবারকে দেওয়ার চুক্তিপত্র করেন।
২৯ জুলাই শনিবার ঐ ছাত্রী মুঠোফোনে আমার সংবাদকে বিষয়টি জানিয়ে বলেন, আমি এ বিচার মানি না। আমাকে শতশত লোকের মাঝে চাপ প্রয়োগ করে রাত ১২ টায় এ বিচার করা হয়েছে। আমি সঠিক বিচার পাইনি। বহিরাগত লোক দিয়ে বিচার করায় স্হানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
যদিও এ বিষয়ে ঐ ছাত্রীর বাবা যোগেন মিন্জি জানান, আমাদের আর অভিযোগ নেই। চেয়ারম্যান, মেম্বার যা ভালো মনে করেছে, আমরা সেটা মেনে নিয়েছি।
চার্জটির পরিচালক প্রদীপের খোঁজে বলদিপুকুর ব্লেজ-চার্জে গেলে তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরে তার নাম্বারে ফোন দিলে, তার স্ত্রী পরিচয়ে একজন জানান, আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমাদের চাপের মূখে এসব একটি গোষ্ঠী রটিয়ে রাত ১২ টায় এমন বিচার করেছে। আমরা বহিরাগত, ওরা বেশী সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই বিচার মানতে আমরা বাধ্য হয়েছি। চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করেন, তিনি ভালো বলতে পারবেন?
এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ (পুটু মন্ডল) কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরে ইউপি-সদস্য ওয়াজেদ আলী জানান, এ বিষয়ে সঠিক বিচার করেছেন চেয়ারম্যান। ইউপি-সদস্য বাবু জানান, প্রদীপকে ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে মারতে চেয়েছিল আমি তাদের নিষেধ করি, তাই তারা আমার উপর অপবাদ দিয়েছে। নারী ঘটিত বিষয়ে মীমাংসার বিপক্ষে আমি।
এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা মিঠাপুকুর থানার এসআই মিজান জানান, মিমাংসার বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরে অবগত করছি।
কেএস