ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নাকাল রামপালের ৪০ হাজার গ্রাহক

রামপাল (বাগেরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২, ০৭:০৮ পিএম
ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নাকাল রামপালের ৪০ হাজার গ্রাহক

বাগেরহাটের রামপালে পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের নাকাল অবস্থা হয়েছে। সরকারের ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ঘোষণা থাকলেও রামপালে তা মানা হচ্ছে না। দিন রাত মানুষ মাত্র ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুতের দেখা পাচ্ছেন।

জানা গেছে, রামপাল উপজেলা জুড়ে এখন মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং চলছে। আর এ কারণে কল কারখানার উৎপাদন হ্রাস, ব্যবসা- বানিজ্যে ধ্বস, হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাত ব্যহত, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লেনদেন, হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে স্বাস্ব্য সেবা ব্যহত, লেখাপড়ায় বিঘ্ন, রাতে চুরির প্রবণতা বৃদ্ধি, মসজিদে নামাজ পড়ায় বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি নানাবিধ সমস্যার মধ্যে এ উপজলার মানুষ বিদ্যুতের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষের  সাথে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের ঘোষণা ছিল ১ থেকে ২ ঘণ্টা লোডসেডিং করা হবে। সিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং করার কথা থাকলেও এখন নেই সেসবের কোন বালাই। যখন ইচ্ছা তখন লোডশেডিং করা হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেল তা দেড়-দুই ঘণ্টার আগে আসছে না। দিন রাত দফায় দফায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। বৃষ্টিহীন শ্রাবণের কাঠ ফাঁটা রোদ ও গরমে মানুষ বিদ্যুতের অভাবে হাফিয়ে উঠছেন। বিশেষ করে গরমে শিশুদের নিয়ে মা বাবা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছে বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। রাত আটটার পর দোকান পাট বন্ধ করতে হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনলাইন সেবা ব্যহত হচ্ছে।

উপজেলার ফয়লাহাট, গৌরম্ভা, গিলাতলা, বাবুরবাড়ি জিরো পয়েন্ট, ভাগা বাজার, রনশেন, পেড়িখালী, ভোজপাতিয়া, মল্লিকেরবেড়, হুড়কা, গিলাতলা, বাঁশতলী, বাইনতলা, উজলকুড়, রাজনগর, ঝনঝনিয়া চেয়ারম্যান মোড়সহ বিভিন্ন মাছের আড়তে বরফের অভাবে ঠিকমতো মাছ প্রক্রিয়াজাত করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে রপ্তানীমুখি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন বিদ্যুতের অভাবে বরফের উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন ডায়াগনষ্টিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়ায় ধ্বস নেমেছে। একজন এলোপ্যাথিক ঔষধের দোকান্দার বলেন আমরা কিছু ঔষধ ফ্রিজে রাখি। ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা যাওয়ায় ঔষধের গুনাগুন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন।

উপজেলার অনেকেই দাবি করে বলেন, এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং করার সিডিউল দেয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। এরফলে যখন তখন লোডশেডিং করা হচ্ছে। মসজিদে নামাজ আদায়ের সময়ও বিদ্যুৎ চলে যায়। গরমে তখন নামাজ আদায় করতে ভীষণ কষ্ট হয়। লোডশেডিং করা হচ্ছে তবুও বিদ্যুৎ বিল কিন্তু কম হচ্ছে না। গ্রাহকদের বোকা বানানো হচ্ছে।

রামপাল উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মো. কামরুজ্জামানের সাথে এ নিয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, রামপালে ৪০ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৬.৮ মেগাওয়াট। অপ পিক আওয়ারে চাহিদা থাকে ২.৫, ৩.০ বা ৩.৫ মেগাওয়াট। আর পিক আওয়ারে ৪.০ থেকে ৪.২ মেগাওয়াট। আমরা সিডিউল মেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করছি। সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি থাকায় অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। সবাই ওই সময় ঘরে ঘরে আলো জ্বালায় এতে চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে লোড দিতে হয়। মাগরিবের নামাজের সময় বিদ্যুতের লোডসেডিং যাতে না হয় সে বিষয়ে তিনি নজর রাখবেন বলে কথা দিলও কথা রাখতে পারেননি। তবে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

কেএস