- বরিশাল থেকে ঢাকা মাত্র দেড়শ’ টাকা ভাড়া
পদ্মা সেতুর প্রভাবে সড়কপথে পরিবহনের রাজত্ব শুরু হওয়ায় বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের বিলাসবহুল লঞ্চ স্টাফদের নৈরাজ্য কমছে। একসময় লঞ্চ স্টাফদের কাছে জিম্মি অবস্থায় থাকা বরিশালের যাত্রীরা এখন নতুন জামাই আদরে ঢাকায় যাচ্ছেন। তাও আবার অর্ধেক ভাড়ায়। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে একমাত্র পদ্মা সেতুর কারণে।
সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দরের টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বিলাসবহুল সুরভী-৮ লঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ওই লঞ্চের কলম্যান জালাল আহমেদ কিছুক্ষণ পর পর “ডেকের ভাড়া দেড়শ’, ডেকের ভাড়া দেড়শ ” বলে যাত্রীদের আকর্ষণ করতে ডাক দিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে এ ভাড়ার কথা শুনে কোনো যাত্রী লঞ্চের সামনের পল্টুনে দাঁড়িয়ে পরলে তাকে বুঝিয়ে লঞ্চে তোলার জন্য জালালের অপর সহযোগিরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এরপর তার (যাত্রী) মালামাল নিজেরা বহন করে নিয়ে লঞ্চে তুলে দিয়ে ডেকের জায়গাও খুঁজে দিচ্ছেন।
যাত্রীরা বলেন, এ যেন নতুন জামাইয়ের আদরে স্টাফরা এখন লঞ্চে তুলছেন।
সূত্রমতে, মাত্র দেড়শ’ টাকা ডেক ভাড়ার কারণে বরিশাল-ঢাকা রুটের ওই লঞ্চের প্রতি যাত্রীদের আকর্ষণও ছিল বেশি। তবে বিলাসবহুল অন্যান্য লঞ্চগুলোতে ডেক ভাড়া ছিল দুইশ’ টাকা। আর সেই হিসেবেও বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ডেক ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
লঞ্চের যাত্রী সুমন খান বলেন, লঞ্চের প্রবেশদ্বারে সরকার নির্ধারিত ডেক ভাড়া ৩৫২ টাকা লেখা থাকলেও যাত্রীদের কাছে চাওয়া হচ্ছে মাত্র দেড়শ’ টাকা। অর্থ্যাৎ নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেকেরও কম ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। অপর লঞ্চগুলো ডেক ভাড়া ৫০ টাকা বেশি হলেও বর্তমান সময়ে বরিশাল থেকে ঢাকা দেড়শ’ কিংবা দুইশ’ টাকায় যাওয়া সম্ভব ছিল না। যা সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতুর কারণে।
সুরভী-৮ লঞ্চের কর্মচারী মোশারফ হোসেন বলেন, এখন প্রতিদিন লঞ্চে যাত্রীদের তুলতে কলম্যানদের ডাকাডাকি করতে হয়। যাত্রীদের বিভিন্নভাবে সুবিধা দিয়ে লঞ্চে তুলতে হয়।
তিনি আরও বলেন, একজন যাত্রীর কাছে ১৮শ’ টাকার ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৬শ’ টাকা চেয়েছি। পরে তিনি অন্য লঞ্চের দিকে চলে যেতে চাইলে ১৫শ’ টাকায় কেবিনটি দিতে হয়েছে। আর এভাবে প্রতিদিন যাত্রীদের সাথে অতিরিক্ত কথা বলতে গিয়ে মুখ ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে এতো কষ্ট ছিলো না। তখন সব কেবিন কাউন্টার থেকে বুকিং হয়ে গেলেও এখন প্রায়ই অর্ধেক কেবিন খালি থাকছে। পারাবত-১১ লঞ্চের এক যাত্রী একটি সিঙ্গেল কেবিন নিয়েছেন। তার সাথে ছিলেন অপর একজন। কেবিন নিয়ে দর-দামের সময় তারসাথে থাকা অপর যাত্রী ভাড়া দেবেন না বলে জানিয়েছেন। আর তাতেই রাজি হয়েছেন কাউন্টারম্যান। অথচ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে সিঙ্গেল কেবিনে থাকা একের অধিক যাত্রীদের ডেক টিকিট কাটা ছিল বাধ্যতামূলক। তা না হলে যাত্রীদের নানানভাবে হেনস্থা করা হতো। পারাবত-১১ লঞ্চের সামনে কলম্যানদের সাথে অতীতে কেবিনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের চিহ্নিত দালালদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কেউ কেবিনের জন্য বলেন না। এমনকি সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার অর্থাৎ যাত্রী চাঁপের এ তিনদিনেও এখন লঞ্চের কেবিন ফাঁকা থাকে। তাই এখন তারা কলম্যানের চাকরি করছেন। এতে তাদের চলার মতো কিছু উপার্জন হচ্ছে।
লঞ্চের যাত্রী মোছাদ্দেক হাওলাদার বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের বিলাসবহুল লঞ্চ স্টাফদের আগের নৈরাজ্য এখন আর নেই। একসময় লঞ্চ স্টাফদের কাছে জিম্মি ছিলো বরিশালের যাত্রীরা। এখন সেই যাত্রীরা নতুন জামাইয়ের আদরে লঞ্চে ঢাকায় যাচ্ছেন। তাও আবার অর্ধেক ভাড়ায়। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে একমাত্র পদ্মা সেতুর কারণে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবে।
কেএস