দক্ষিণাঞ্চলে ৩৯ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে কৃষি ব্যাংক

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২২, ০৯:৪১ পিএম
দক্ষিণাঞ্চলে ৩৯ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে কৃষি ব্যাংক

ব্যাপক জনবল সংকট থাকা সত্যেও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গত অর্থ বছরে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা বিভিন্ন ধরনের ঋণ বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি ৮৬৭ কোটি আদায়ের মাধ্যমে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা মুনফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় দেশের একমাত্র কৃষি ভিত্তিক বিশেষায়িত রাষ্ট্রীয় এ ব্যাংকটির ১২৯টি শাখার মধ্যে গত অর্থ বছরে ৭২টি শাখা মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আগের বছর একইসময়ে ৫৭টি শাখা মুনাফায় ছিলো। এ অঞ্চলে ব্যাংকটির প্রায় সাড়ে চার লাখ গ্রহীতার মধ্যে কৃষিসহ বিভিন্ন ধরনের ঋণ বিতরণের ফলে ব্যাংকটির বর্তমান ঋণের স্থিতি প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, ব্যাংকটিতে নতুন প্রবর্তিত মিলেনিয়ার, লাখপতি স্কিম ও মাসিক মুনাফা প্রকল্পসহ ছয়টি স্কিমের পাশাপাশি সঞ্চয়ী ও চলতি হিসেব মিলিয়ে গত অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫৪ হাজার নতুন হিসেবে খোলা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্বল্প সুদে শস্য ঋণ বিতরণের পাশাপাশি মাত্র ৪% সুদে মসলা জাতীয় ফসলের জন্য ঋণ বিতরণ করছে।

করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঋণদান কর্মসূচীর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে কৃষি ব্যাংক মাত্র ৬% সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ এসএমই কর্মসূচীর আওতায়ও ৪% সুদে প্রায় সাড়ে তিনশ উদ্যোক্তার মাঝে আরো ১০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। একইভাবে যেকোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশেষ ঋণ লাভ করেছেন।

রাষ্ট্রীয় বিশেষায়িত এ বাণিজ্যিক ব্যাংকটি ‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে নিজস্ব তহবিল ছাড়াও করোনা মহামারীতে সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায়ও সবগুলো ঋণ বিতরণ করার মধ্যদিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ব্যাংকটিতে এখনো অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৭৪২ কোটি টাকা। আদায়যোগ্য অনাদায়ীর পরিমাণ মাত্র ৮৮ কোটি টাকা। এসবের মধ্যে প্রায় ১৪.৬৬ কোটি টাকা আদায়ে ২৯৬১টি সার্টিফিকেট মামলা ছাড়াও অর্থঋণ আদালতে আরো বেশ কিছু মামলা চলমান রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, অনাদায়ী ঋণের একটি বৃহৎ অংশ দ্বীপজেলা ভোলায়। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া বেষ্টিত ওই জেলায় নদীর ভাঙনে হাজার হাজার কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পরায় তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। যাদের অস্তিত্ব বর্তমান রয়েছে, তারাও কৃষি জমিসহ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ফলে বাস্তুচ্যুত নিত্য অভাবী ওইসব মানুষের কাছ থেকে বকেয়া ঋণ আদায় কষ্টকর হয়ে পরেছে। তারপরেও গত অর্থবছরে দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে বিপুল পরিমাণ আদায়যোগ্য অনাদায়ী ঋণ আদায় করা সম্ভব হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলো গত অর্থবছরে প্রায় পৌনে দুইশ কোটি টাকার বৈদেশিক রেমিটেন্স গ্রহণ করে গ্রাহকসহ প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলার ১২৯টি শাখাকেই অনলাইনে আনার ফলে সুদূর পল্লী এলাকার যেকোনো মানুষ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে সারাদেশের যেকোনো স্থানের ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণে সক্ষম হচ্ছেন। তবে দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় বিশেষায়িত এ ব্যাংকটির লক্ষ্য পূরণসহ জনসেবায় এখন সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল সংকট।

দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলার ১২৯টি শাখাসহ বিভাগীয় ও আঞ্চলিক অফিসগুলোর জন্য ১৬৬১ জনের মঞ্জুরীকৃত জনবলের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৮০৪ জন। যা মঞ্জুরীকৃত পদের মাত্র ৪৮%। ফলে ঋণ বিতরণ ও আদায়সহ সবধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হলেও খুব সহসা পরিস্থিতি উত্তরণেরও সম্ভাবনা নেই।

এ ব্যাপারে কৃষি ব্যাংকের বরিশাল বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজার সালাহ উদ্দীন রজিব বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত রয়েছেন। পরিস্থিতি উত্তরণে জরুরি ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, সব ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সারাদেশের ন্যায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি সচল রাখতে ব্যাংকের প্রত্যেক কর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

আমারসংবাদ/এসএম