- নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ কি করছে প্রশ্ন স্থানীয়দের
- মুন্না-জুথি, নয়ন, রিফাত ও পথশিশু তবলা জেল থেকে বের হয়ে ফের চালাচ্ছে মাদক সিন্ডিকেট
- স্থানীদের দাবি মাদক ব্যবসায়ীদের হাত থেকে পথশিশুদের বাঁচান
শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচ টা বাজে তখন বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত বিআইডব্লিউটিএ সংলগ্ন লঞ্চঘাট র্টামিনালে ঘুরতে যায় আমার সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদক। তখন হঠাৎ এক পথশিশু এসে বলেন মামা কি লাগবে। প্রতিবেদক বিষয়টি বুঝতে না পেরে পথশিশুর কাছে জিজ্ঞেস করেন কি আছে তোমার কাছে। তার প্রশ্নে জবাবে পথশিশু বলেন, মামা গাঁজা আছে ১ শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৫ শ’ টাকার মোচা। ট্যাবলেট লাগলে তা এনে দেওয়া যাবে। প্রতিবেদক পথশিশুকে বলেন আমার কিছুই লাগবে না। তোমার নাম কি মামা, বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই স্থান ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যায় পথশিশুটি। পরে প্রতিবেদক ওই স্থান ত্যাগ করে লঞ্চঘাটের প্রধান ফটকের গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে গিয়ে দাঁড়ালে সেখানেও এসেও আর এক পথশিশু একই প্রশ্ন করেন মামা কিছু লাগবে। পরে র্টামিনাল ও লঞ্চঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র পুরো লঞ্চঘাট জুড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লঞ্চঘাট এলাকায় বসে গাঁজা থেকে শুরু করে ইয়াবা সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের হাট। আর মাদক ব্যবসায়ীদের নির্ভর স্থান হিসাবে পরিনত হয়েছে লঞ্চঘাটটি। নিরভ ভূমিকায় রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ বরিশাল সদর নৌ থানার পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়েই মাদক বেচা-কেনা চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তাই নিরভ নৌ পুলিশ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী কিশোর কিশোরী ছেলে ও মেয়েরা প্রকাশ্যে গাঁজা ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রয় করে যাচ্ছে। আর মাদক ব্যবসায়ীদের মূল র্টাগেটই হলো পথশিশুরা। মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেরা আড়ালে থেকে পথশিশুদের দিয়েই বিক্রি করাচ্ছে মাদক। সংবাদকর্মীদের দেখে পালিয়ে যায় মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত পথশিশুরা।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, রসুলপুর এলাকার রিফাত ওরফে গাঁজা রিফাত ও মুন্না-জুথি দম্পতি’র নেতৃত্বে ছোটো ছোটো ছেলে ও মেয়েদের দিয়ে সাপ্লাই করা হচ্ছে মাদক। তবে এদের মাদক বিক্রির কৌশল একটু আলাদা বললেই চলে। কখনও খেয়াঘাটের পাশে আবার কখনও লঞ্চ র্টামিনাল , গাড়ি পাকিং’র মাঠে, কাচা বাজারের সামনে সহ বিভিন্ন পয়েন্টে।
উপস্থিত জনতারা বলেন, পথশিশু বায়েজিদ রাকিব ওরফে ছোটো রাকিব, তবলা, বাচ্চু ওরফে (চায়না বাচ্চু) গান ওয়ালাসহ একাধিক ছেলে ও পথচারী মেয়েরা আলফা, অটো, লঞ্চ স্ট্যাফসহ স্থানীয়দের কাছে বিকাল হলেই গাঁজা ইয়াবা সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রয় করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, বাবা-মা হারা পথশিশুদের র্টাগেট করেন ভাটারখাল এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা মুন্না-জুথি দম্পতি ও রসুলপুর বস্তির রিফাত-নয়ন। তাদেরই দিয়েই লঞ্চ এলাকায় চলছে মাদক বানিজ্য। তবে প্রশাসন কঠোর ভাবে ভূমিকা নিলে হয় তো মাদক ব্যবসায়ীদের হাত থেকে এই কোমলমতি শিশুরা রেহাই পেতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লঞ্চঘাট এলাকার এক হোটেল ব্যাবসায়ী বলেন, বরিশাল সদর নৌ থানায় বর্তমানে ওসিসহ ২৩ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কি ভাবে মাদক ব্যবসায়ীরা পথশিশুদের দিয়ে মাদক বেঁচা কেনা করাচ্ছে তা আমি বুজতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, অনেক সময় দেখি নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বসেই মাদক বিক্রি করছে পথশিশুরা। এগুলো কি তাদের চোখে পড়ে না।
আনুসন্ধানে জানা গেছে, মুন্না-জুথি দম্পতি, নয়ন, রিফাত ও পথশিশু তবলা মাদক সহ আটকের পর র্দীঘ দিন জেল খেটে বের হয়ে পূর্নরায় লঞ্চঘাট এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী জুথির মুঠো ফোনে জানতে ফোন করা হলে জুথি বলেন, আমি এখন আর মাদক বিক্রয়ের সাথে জড়িত নয়। এবং কি কোন পথশিশু দিয়ে মাদক ব্যবসাও করাচ্ছি না। অভিযোগ গুলো মিথ্যা।
অভিযুক্ত রিফাতের মুঠোফোনে কল দিলে বলেন, ভাই আমি আপনাদের সাথে দেখা করবো। আপননি নিউজটা দয়া করে করবেন না। অন্যদিকে লক্ষ করা গেছে, নগরীর লঞ্চঘাট থেকে শুরু করে ভাঙ্গারীর দোকান গুলোতে থাকা পথশিশুরা গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, সিসা, ড্যান্ডি, ইয়াবা, পেথিড্রিন ইত্যাদি মাদকে আসক্ত। এসব মাদকদ্রব্য গ্রহণের কারণে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। ঝরে পড়ছে শিক্ষা থেকে।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসনাত জামান আমার সংবাদকে বলেন, পথশিশুদের দিয়ে লঞ্চঘাট এলাকায় মাদক ব্যবসা চলছে বিষয়টি শুনেছি। এবং কি কিছু দিন আগে আমরা গাঁজাসহ মুন্না-জুথি দম্পতি ও নয়ন-রিফাত নামে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করেছিলাম। তারা পূর্নরায় জেল থেকে বের হয়ে মাদক ব্যবসা চলাচ্ছে পথশিশুদের দিয়ে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পুলিশের লোক দেখলেই তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স রয়েছি। আমাদের মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল করিমের সাথে কথা হলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, পথশিশুদের দিয়ে মাদক বিক্রি করাচ্ছে বিষয়টি শুনেছি। তবে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোতয়ালী থানার উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, বিষয়টি আমারা খতিয়ে দেখবো। তিনি আরো বলেন, কোন মাদক ব্যবসায়ী আমাদের হাত থেকে রেহাই পাবে না। সে যেই হোক।
কেএস