লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায় কলেজ পড়ুয়া এক কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করেছে তিলক নামের এক যুবক। ভারতের শিলিগুড়ি জেলার বন্দি দশা থেকে বাঁচার জন্য আকুতি জানায় ওই কিশোরী। এমন একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
কিশোরীর ভাই কামরুজ্জামান লুলু চলতিবছর ৬ জানুয়ারি হাতিবান্ধা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তার কলেজ পড়ুয়া বোন গতবছর ৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় হাতিবান্ধা মহিলা কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কলেজ গেটে দেখা পেয়ে আসামি তিলক চন্দ্র নানা ভাবে প্রভাবিত করে কলেজ পড়ুয়া কিশোরী বোনকে নিম্নবর্ণিত আসামিদের যোগসাজসে মটর সাইকেল যোগে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এই কাজে ১নং আসামিকে সহযোগিতা করে আসামির পিতা ২। ধনঞ্জয় (৫০) ৩। গোপাল (৩২) পিতা: প্রফুল্ল চন্দ্র, ৪। হামিদুল ইসলাম হৃদয় (১৯), পিতা: ফজলুর রহমান ৫। মনিরুজ্জামান তান্না (১৯), পিতা: ফজায়েল হোসেন তারেক, সকলের বাড়ি গড্ডিমারী, হাতিবান্ধা উপজেলা। সকল আসামির বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন হাতিবান্ধা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় অন্যান্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারক আদালতে।
এদিকে মঙ্গলবার (৯আগস্ট) রাতে পাচার হওয়া কিশোরীর একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে পড়ে সবার। অজ্ঞাত স্থান থেকে এক ভিডিও বার্তায় অপহৃত কিশোরী জানায়, তাকে তিলক অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। বিয়ে করার সময় তিলক মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। পরে তাকে ভারতে পাচার করার পর তিলক হিন্দু ধর্মে ফিরে যায়। পাচার করার সময় ঐ কিশোরীর হাত পা বাঁধা অবস্থায় ছিল বলে জানায়। বর্তমানে ভারতের শিলিগুড়ি জেলার ঘোরার মোড়ে বন্দি অবস্থায় রেখে নির্যাতন চালানো হচ্ছে ঐ কিশোরীকে। সে বাঁচতে চায় তাকে যেন উদ্ধার করা হয়। দেশ বিদেশে থাকা যে যেখানে আছেন তাদের কাছে কিশোরী সহযোগিতা চেয় ভিডিওটি ছড়িয়ে দেন। এদিকে কিশোরীর হৃদয়বিদারক ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় উঠে।
হাতিবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহাআলম বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমরা এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে ২০০০সালের নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছি। মামলা নং০৮ তারিখ ০৬ জানুয়ারি ২০২২ সাল হাতিবান্ধা থানা। অভিযোগ পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ১নং আসামি বাদে সকল আসামি জামিনে রয়েছেন। বর্তমান মামলাটি বিচারকি আদালতে রয়েছে। পাচার হওয়া কিশোরীর ভিডিও বার্তার কথা শুনতে পেরেছি। কিশোরীকে উদ্ধারে দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
পাচার হওয়া কিশোরীর ভাই মামলার বাদী দুলু বলেন, দীর্ঘ ৭মাস অতিবাহিত হলেও আমি আমার বোনকে ফেরত পাইনি। অথচ পাচার কালে সহযোগিতা কারী অন্যান্য আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গত মঙ্গলবার আমার বোন বন্দি অবস্থা থেকে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছে। তাকে সেখানে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং অজ্ঞাত স্থান বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করছি আমার বোনকে উদ্ধার করে ফেরত আনতে আপনারা সকলে সহযোগিতা করুন।
আমারসংবাদ/এসএম