কচুয়ায় নির্মাণ হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র ‘মুক্তির সরোবর’

চাঁদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ০১:৫৭ পিএম
কচুয়ায় নির্মাণ হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র ‘মুক্তির সরোবর’

চাঁদপুরের কচুয়া পৌরসভায় প্রায় ৩৫ হাজার লোকের বসবাস। আয়তন ১০ বর্গ কিলোমিটার। ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা হলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন ধরণের বিনোদন কেন্দ্র ছিল না। পৌরবাসীর কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই প্রায় ১ একর ৯৬ শতাংশ পরিত্যক্ত পুকুরে ‘মুক্তি সরোবর’ নামে বিনোদন কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং এটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান। এটি নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে বরাদ্দ আরো বাড়তে হবে বলে জানালেন প্রকৌশল বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে ও কচুয়া পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, কচুয়া পৌরসভা ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমান সরকারের আমলে এটি ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ধাপে ধাপে পৌরসভার যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন হলেও কোন বিনোদন কেন্দ্র ছিল না। পৌরসভার সব শ্রেণি পেশার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিলো একটি বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা। তারই প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্প তৈরি করে ২০২০ সালে ‘মুক্তি সরোবর’ বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়। এরপর ২০২১ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৬০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজ শেষ করতে আরো ৬-৮ মাস সময় লাগবে।

প্রকৌশল বিভাগের তথ্য মতে, বিনোদন কেন্দ্রটিতে শিশুদের জন্য খেলা-ধুলার ব্যবস্থা, বয়স্কদের জন্য হাটার ব্যবস্থা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য মুক্তমঞ্চ নির্মাণ হচ্ছে। এটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে শুধুমাত্র কচুয়া পৌরবাসী নয়, পুরো উপজেলার মানুষের বিনোদন এবং সময় কাটানোর সুযোগ পাবে। পাশাপাশি কচুয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য আরো সমৃদ্ধ হবে।

কচুয়ার সংস্কৃতি কর্মী প্রিন্স মাহমুদ হাসান বলেন, পৌর এলাকার লোকজনের বিনোদন কেন্দ্র ছিল না। যার কারণে অর্থ ও সময় অপচয় করে দুরে গিয়ে লোকজন সময় কাটাত। এখন এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এখানেই সব বয়সী মানুষ আসবে। বিশেষ করে যুবকরা খারাপ কাজে লিপ্ত না হয়ে এখানে এসে বিনোদনের সুযোগ পাবে।

চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আগামী ৫০ বছরেও কচুয়া পৌরসভায় এত বড় দৃষ্টিনন্দন একটি বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ হবে আশা করিনি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মেয়রের এমন উদ্যোগে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করছি এটির নির্মাণ শেষ হলে শুধুমাত্র কচুয়া পৌরসভা নয়, পুরো উপজেলাবাসীর জন্য বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের কচুয়াতে বিনোদনের কোন জায়গা ছিল না। সরকারের উদ্যোগে এই বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ হলে আমাদের শিশু সন্তানদের জন্য অনেক উপকার হবে। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য আরো বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোজন আসবে। ব্যবসা উন্নত হবে।

কচুয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রিয়তোষ পোদ্দার বলেন, এই বিনোদন কেন্দ্রটি নির্মাণ হলে সংস্কৃতি চর্চার একটি সুযোগ তৈরি হবে। খুব শীগগীরই এটি উদ্বোধন হবে, সেই প্রত্যাশায় পৌরবাসী।

কচুয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, কচুয়ায় একটি বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংসদ সদস্যের নিকট দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল। এখন এটি নির্মাণ হচ্ছে। আশা করি আমাদের পরিবারের লোকজন এবং বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে বিনোদনের সুযোগ পাবে। এতে ব্যবসায়ীদেরও লাভ হবে।

কচুয়া পৌরসভার মেয়র মো. নাজমুল আলম স্বপন বলেন, এটি নির্মাণ হলে কচুয়া পৌরবাসী এবং জনগণ সারাদিন পরিশ্রমের পর একটু হলেও বিশ্রামের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে এবং বয়স্ক লোকজন হাটা-চলার সুযোগ পাবেন। আশা করি আগামী ৭-৮ মাসের মধ্যে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। এরপরই আমরা এটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিব।

কচুয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মো. ফজলুল হক বলেন, এটি পরিকল্পনা করার সময় আমি ছিলাম না। আমি গত ৯ মাস পূর্বে এখানে এসে যোগদান করেছি। তখন প্রকল্পের প্রায় ৪০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু এটির চার পাশে দেয়াল নির্মাণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আনুষঙ্গিক আরো কাজ করতে হচ্ছে। এটি নির্মাণ করার জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে। কমপক্ষে ১৫-১৬ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। অতিরিক্ত বরাদ্দ ও কাজের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলগণ পরিদর্শনে এসেছেন। আশা করি নির্ধারিত সময়ে এটির কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারব।

আমারসংবাদ/এসএম