বিলের জলে গুপ্ত ঘাতক হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২২, ০৭:২৪ পিএম
বিলের জলে গুপ্ত ঘাতক হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য

মুক্ত জলাশয়, বিলাঞ্চল ও খালে গুপ্ত ঘাতকের মতো অবৈধ কারেন্ট, চায়না-দুয়ারী ও ভেসাল জাল মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে অসাধু মৎস্য শিকারীরা। এতে হুমকির মুখে পরেছে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ জীব-বৈচিত্র্য।

সরেজমিনে জেলার গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধনের জন্য খাল-বিলের মধ্যে নিষিদ্ধ কারেন্ট, চায়না-দুয়ারী, ভেসাল জাল, বাঁশের চাটাইয়ের গড়ায় চাই-বাইন্না দিয়ে নিধন করা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনাসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। এমনকি সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টেটা দিয়ে নিধন করা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।

এ ব্যাপারে বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণে মাছের রেনু পোনা ধ্বংসের পাশাপাশি ৭০ প্রকার জলজ প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে জীব-বৈচিত্র্য চরম হুমকি মুখে রয়েছে। পানিতে বসবাসকারী ছোট ছোট প্রাণীগুলোকে বড় প্রাণীরা খেয়ে বেঁচে থাকে। এখন ছোট প্রাণীগুলো যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে বড় প্রাণীগুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে। যার প্রভাব পরবে জনজীবনে।

তিনি আরও বলেন, জীব-বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হলে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। এজন্য যে আইন রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে সেই আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ জাল উৎপাদনকারী কারখানাগুলো ধ্বংস করা হলে রক্ষা পাবে জীব-বৈচিত্র্য।

সচেতন নাগরিকদের মতে, দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী রক্ষায় জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে কারেন্ট ও চায়না দুয়ারী জাল ধ্বংস করা হলেও গৌরনদী, উজিরপুর, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে দৃশ্যমান কোন অভিযান পরিচালিত হচ্ছেনা। এমনকি হাট-বাজারগুলোতে অবৈধ জাল বিক্রি করা হলেও নেই কোন অভিযান।

গৌরনদী উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় ২০২১ জুলাই থেকে ২০২২ জুন পর্যন্ত ১২টি অভিযান পরিচালনার নিয়ম রয়েছে। এ জন্য দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রতি তিন মাস পরপর ১৪ হাজার একশ’ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেই বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবুল বাসার জানান, গত অর্থবছরে ১৪টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মাগুরা স্টিল ব্রিজ ও দোনার-কান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার মিটার অবৈধ জাল ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, মৎস্য শিকারিদের সচেতন করে তোলার পাশাপাশি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রতিটি উপজেলায় অভিযান পরিচালনার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/এসএম