কাজে ফেরাতে কমলগঞ্জ প্রশাসনের মতবিনিময়

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া কাজে যোগ দেবেন না চা শ্রমিকরা

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৮:৩৮ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া কাজে যোগ দেবেন না চা শ্রমিকরা

মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে দলই ভ্যালী ক্লাবে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় চা শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহবান জানানো হলেও তাদের দাবি একটাই, মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া তারা কাজে যোগ দেবেন না।

সভায় কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন, কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক, মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসিদ আলীসহ বিভিন্ন চা বাগানের ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপকেরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় চা শ্রমিকদের পক্ষে পাত্রখোলা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন, মদনমোহনপুর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি উমা সংকর গোয়ালা, শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মিলন নায়েকসহ বিভিন্ন বাগানের পঞ্চায়েত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পাত্রখোলা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি ঘোষণা না আসলে চা শ্রমিকদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, চা শিল্পের স্বার্থ বিবেচনা করে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চা শ্রমিকেরা মজুরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে ঘোষণা শুনতে চান। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানানো হবে বলে ইউএনও জানান।

উল্লেখ্য, বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দৈনিক মজুরি ১২০টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বৃদ্ধির দাবীতে গত ৯ আগস্ট থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছেন সারা দেশের চা শ্রমিকরা।

এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গণেশপাত্র, কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন জানান, মনু-দলই ভ্যালীর ২৩টি চা বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, চা ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে আলীনগর চা বাগানে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চা বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, চা ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দদের নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভায় মালিক ও সরকার পক্ষের সাথে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্রনেতা মোহন রবিদাসকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান, সরকার ও মালিক পক্ষ যদি মজুরি বৃদ্ধি করতে না পারে তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতদিনের মধ্যে আমাদের মজুরি ঘোষণা করবেন সে বিষয়ে টিভিতেও যদি আমাদের বলেন তাহলেও আমরা কাজে যোগদান করবো। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এসব চা বাগানে আন্দোলনরত শ্রমিকরা দাবি করেন, আজ টানা ১২ দিন হলেও আমাদের ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন নিয়ে টালবাহান শুরু হয়েছে। একবার ১৪৫ টাকার কথা বলা হচ্ছে। আবার প্রধানমন্ত্রী মজুরি ঘোষণা করবেন বলে কাজে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। ঘরে খাদ্য নেই, রেশন নেই, মজুরি নেই কিভাবে সংসার চলবে। তবে প্রধানমন্ত্রী এই মুহূর্তে মজুরি ঘোষণা না করলেও টেলিভিশনেও যদি তিনি ঘোষণা দেন আমরা সাথে সাথেই কাজে যোগ দেবো। তা না হলে যত দ্রুত সম্ভব ৩০০ টাকা মজুরি চুক্তি বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।

চা শ্রমিকদের আন্দোলন বিষয়ে শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তির বিষয়টি সর্ব্বোচ্ছ পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এখন পর্যন্ত আর কোন আলোচনা হয়নি। তবে ধ্বংসাত্মক কিছু যাতে না ঘটে সে বিষয়ে আমরা তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করছি।

আরো উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা ৩০০ টাকা করার দাবিতে ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে গত ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া দেশের ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিকরা অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট শুরু করেন।

আমারসংবাদ/এসএম