পান আদিকাল থেকে জড়িয়ে আছে এদেশের গ্রাম-বাংলার নানা ঐতিহ্যে। প্রায় অনেক মানুষের দৈনন্দিন নানা খাদ্যের তালিকায় পান একটা স্থান দখল করে নিয়েছে। এছাড়া বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ নানারকম সামাজিক অনুষ্ঠানে পানের একটা আলাদা কদর রয়েছে।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে পানের বাম্পার ফলন সত্বেও বাজার মূল্য কম হওয়ায় পান চাষীদের মুখে হাসি নেই। ফলে চলতি সময়ে পান চাষ করে লাভের পরিবর্তে ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে পান চাষীদের। পানের বাম্পার ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন পান চাষীরা।
গোসাইরহাট উপজেলায় প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়৷ চালতা ভোটা পান ৬২ হেক্টর, সাচি পান ৩৫ হেক্টর, মিস্টি পান ১৫ হেক্টর, দেশীয় উন্নত পান ২১০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে৷ উপজেলায় ১৫শ এর অধিক পানচাষী রয়েছে।পান চাষই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস।
পান চাষী দেলোয়ার হোসেন খান জানান, গত বছরের তুলনায় ফলন ভালো অথচ ন্যায্য মূল্য পাই না। এজন্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। নিত্য পণ্যের দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধগতি। বাজারে সব কিছুর দাম বাড়লেও পানের দাম নেই। পানের বরজের প্রধান সামগ্রী খৈল, বাঁশের শলা, বরজের ছাউনির কাজে ব্যবহার করা ক্যাশির দাম বেড়েছে অথচ পানের দাম কমেছে।
তর জুশিরগাঁও গ্রামের পান চাষী মো. আবজাল আকন বলেন, পান বিক্রির টাকায় সংসার চালানো তো দুরের কথা বরজ চাষের খরচও উঠাতে পারছিনা। সংসার ও বরজ চাষের খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অন্য দিকে বরজের জন মজুরি লাগাম হীন ভাবে বেড়েই চলেছে।
পানের আড়ৎদার ইউনুস ঘরামী বলেন, বাজারে এখন পানের চাহিদা কম। একে তো পান রপ্তানি বন্ধ তারপর আবার ভারত থেকে পান আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে পান আমদানি বন্ধ ও বিদেশে পান রপ্তানি চালু করলে দাম পেত চাষিরা।
প্রতিদিন ৫/৬ঘন্টা বরজের কাজের মজুরি ৬০০/৭০০ টাকা। এমনি ভাবে পানের দাম কম থাকলে পান চাষীরা পান চাষের আগ্রহ হারাবে এমনটি ধারনা করছেন এলাকার পান চাষীরা। তবে সরকারি সহায়তা পাওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার পান চাষীরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, উপজেলার সম্ভাবনার অর্থনৈতিক ফসল পান শিল্প। বিগত সময়ে পান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছিল পান চাষিরা। আর তাই এবারও পান চাষের প্রতি তাদের প্রচুর আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। বর্তমানে অনাবৃষ্টির কারণে আশানুরূপ পান না পাওয়ায় চাষিদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাই পান চাষীদের সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের দেশী পান ইউরোপে রপ্তানি হতো। কয়েক বছর আগে আমাদের পানচাষে সাইটোনেলা নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দেখা দেয় এতে ইউরোপে পান রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। তবে ওই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হলেও ইউরোপ এখনও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। ফলে দেশী পানচাষীরা মূলত দেশী বাজারের উপরই নির্ভরশীল।
কেএস