কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় শফিকুল ইসলাম শফির ছাদ বাগানে ৩৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট ও এডেনিয়ামের রাজ্য। ওয়াসিস নামে তার বাড়ির বিল্ডিং এর তৃতীয় ও ৪র্থ তলায় ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম প্রজাতির বাগান রয়েছে। ছাদের ওপর থরে থরে সাজানো রয়েছে ৩৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম। গড়ে তুলেন শখের ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম বাগান।
ভেড়ামারা সরকারি কলেজ পাড়া এলাকার মরহুম মোক্তার হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম শফি। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় শফিকুল ইসলাম শফির। ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি ভালোবাসা ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি শফিকুল ইসলাম শফির গাছ লাগানো ও পরিচর্চা করা ছিলো তার প্রধান নেশা।
ছেলে বেলায় সবাই যখন খেলাধুলা করতো শফিকুল ইসলাম শফি তখন থেকে গাছ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম সংগ্রহে। শখের বশে তার নিজ বাড়ির ৩য় ও ৪র্থ তলার ছাদে সেড এবং ছোট ছোট সেড তৈরি ও বিভিন্ন সামগ্রীর উপর ৩৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়ামের বাগান তৈরি করেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ প্রেমীরা তার বাড়িতে ভীড় জামায়। গত তিন বছর ধরে শফিকুল ইসলাম শফি ছাদ বাগানে ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়ামের রাজ্য তৈরি করতে শুরু করে। বর্তমানে তার ছাদ বাগানে ৩৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম রয়েছে।
শফিকুল ইসলাম শফি জানান, ছোটবেলা থেকেই গাছের প্রতি ভালোবাসা ছিল। সেই থেকে সংগ্রহ করতেন বিভিন্ন রকমের গাছ। নতুন প্রজাতির ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম উদ্ভাবন ও রক্ষণাবেক্ষণের তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ শেষ করে নিজ বাগানে ছুটে আসেন। এ মরু উদ্ভিদ টিকিয়ে রাখতে সেড নির্মাণ, গাছের কাঁটা পর্যবেক্ষণ ও মাটি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন যত্ন নেন। বাসায় এসে প্রথমে ছাদে যাই। তারপরেও শখের বসে চলছে তাদের এই ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম বাগান।
তবে প্রথমদিকে এই মরু উদ্ভিদকে বসে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আগামীতে ক্যাকটাসের এই সংগ্রহশালাটি ১ হাজার প্রজাতিতে উন্নীত করার চেষ্টা করছি। ২০১৯ সালে এই ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়ামের বাগান শুরু করি। দিন দিন ক্যাকটাস সংগ্রহ আরো জোরে সরে শুরু করে। ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম সম্পর্কেও তাঁর জানা শোনাও অনেক ভালো। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়িতে আসলে সে অনেক রাত পর্ষন্ত নিজ হাতে গাছ পরিচর্চা করে থাকে। খাওয়ার কথা মনে থাকেনা। অনেক সময় সেডে তার খাওয়ার দিয়ে আসতে হয়।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেশের মানুষের কাছে ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম সহজলভ্য করে তোলা এবং একটি সুন্দর ক্যাকটাস পার্ক তৈরি করা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ, ভারত, থাইল্যান্ড, জাপান, ইটালী ও স্পেন থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম নিয়ে আসেন। বর্তমানে ছাদ বাগানে ২২০ প্রজাতির ক্যাকটাস গাছ রয়েছে। ১০০ প্রজাতির সাকুলেন্ট গাছ রয়েছে। ৩০ প্রজাতির এডেনিয়াম গাছ রয়েছে।
শফিকুল ইসলাম শফির স্ত্রী ও স্কুল শিক্ষিকা জুলেখা খাতুন জানান, তার মত আমিও গাছ ভালোবাসি। সে ব্যাবসা, পরিবারকে যেমন সময় দেয় তেমনিভাবে ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম বাগানেও তেমনি ভাবে সময় দেয়। আমার একমাত্র মেয়ে সুমি ও তার বাবার বাগানে লেখাপাড়ার পাশাপাশি খোঁজখবর এবং সময় দিয়ে থাকে। ক্যাকটাস,সাকুলেন্ট ও এডেনিয়ামের বাগান দেখে আমার আগ্রহটা আরও বেশি বেড়ে গেছে।
দর্শনার্থী জলি বিশ্বাস জানান, শফিকুল ইসলাম শফি তার বাড়ির ৩য় ও ৪র্থ তলায় ওয়াসিস নামে ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম প্রজাতির গাছ ও তার কাটাগুলোকে অনেক সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। আমরা যদি মানুষের গুণগুলোকে এমন করে সাজাতে পারতাম তাহলে সমাজটা কতসুন্দর হতো। নতুন নতুন বিভিন্ন গাছ আগামীতে আরো দেখতে পাবো বলে এ প্রত্যাশা বা আশা করি।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়খুল ইসলাম জানান, শফিকুল ইসলাম শফির ছাদ বাগান দেখলে সবার ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট ও এডেনিয়াম প্রজাতি গাছে প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। এটা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। শফিকুল ইসলাম শফি আগামীতে আরো বড় ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট ও এডেনিয়ামের বাগান তৈরি করবে বলে আমরা আশাবাদি।
এআই