ক্ষেতলালে সার নিয়ে বিপাকে কৃষক

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২, ০৫:২৭ পিএম
ক্ষেতলালে সার নিয়ে বিপাকে কৃষক

জয়পুরহাটে ক্ষেতলাল উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বিভিন্ন হাট-বাজারে ও মোড়ে খোলা বাজারে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম বেশি নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আমন চাষিরা। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন সার কিনতে আসা কৃষকরা।

ভরা বর্ষায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলতে থাকায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জমি চাষ করতে হচ্ছে। তার ওপর বাড়তি দামে সার কিনে আবাদ করতে বেশি খরচ পড়বে বলে কৃষকরা জানান।

জানা গেছে, উপজেলায় সরকারিভাবে ১১ জন বিসিআইসি এবং ৩০ জন বিএডিসি ডিলারসহ মোট ৪১ জন ডিলারের মাধ্যমে উপজেলার তালিকাভুক্ত ৫৪ জন খুচরা বিক্রেতাসহ সাধারণ কৃষকদের মাঝে সার বিক্রয় করা হয়।

এ উপজেলায় ফসল উৎপাদনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩৪১ মেট্রিক টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত মাত্র ১৪ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ হয়েছে। ওই বরাদ্দকৃত সার দিয়ে চলতি মৌসুমে রোপণকৃত ১০ হাজার ৬৪০ হেক্টর আমন ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সারের চাহিদা পূরণ সম্ভব। কিন্তু বাজারে সার সংকট দেখিয়ে উপজেলার অধিকাংশ ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রয় করছে এমন অভিযোগ উঠেছে।

ফলে বেশি মূল্যে ক্রয় করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। সারের চাহিদা পূরণ ও ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবেলায় গত ২৪ আগস্ট উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় আবারো ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন অতিরিক্ত সার বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য টিএসপি ১৫০০ মেট্রিক টন, এমওপি ২০০০ মেট্রিক টন ও ডিএপি ১০০০ মেট্রিক টন। এ সব সার দ্রুত বরাদ্দ এলে কিছুটা সংকট মোকাবেলা সম্ভব হবে এমন দাবি কৃষি বিভাগের।

কৃষকদের অভিযোগ, বর্তমানে এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সারের দোকানে সরকারি মূল্যের চেয়ে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ হতে ১ হাজার ৩০০, ডিএপি ৮০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার হতে ১ হাজার ১০০, এমওপি ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার হতে ১ হাজার ২০০ ও টিএসপি ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ৫০০ হতে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের তেলিহার গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলার করিমপুর ত্রি-মোহনী বাজারের সারের দোকান থেকে টিএসপি সার সরকারি মূল্য প্রতি কেজি ২২ টাকা হলেও ৩৪ টাকা ও এমওপি ১৫ টাকার পরিবর্তে ২৩ টাকা দরে ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছি। ফলে আমন ফসল উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, খোলা বাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধিতে উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই। সেই সুযোগে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রি করছে। সারের মূল্য তালিকা দোকানের সামনে ঝুলানো থাকলেও দোকানের ভিতরের চিত্র ভিন্ন। আবার সার বিক্রয়ের কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে বর্গাচাষি এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ফসল উৎপাদন খরচ কমাতে সারের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর জোড় দাবি জানিয়েছেন।

খুচরা সার বিক্রেতা উপজেলার স্বপন বলেন, ডিলাররা বস্তা প্রতি দাম বেশি নেয়ায় কৃষকদের কাছ হতে দাম বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছি। উপজেলার চৌমুহনী বাজারের সার ডিলার বেলাল হোসেন বলেন, সরকারি মূল্যের বেশি নেয়ার সুযোগ নেই। যদি কোন খুচরা বিক্রেতা বেশি মূল্য নিলে তার দ্বায় ওই বিক্রেতার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, কৃষকরা যাতে সরকারি মূল্যে সার সংগ্রহ করতে পারে সেই জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে নজরদারি করছে। কৃষকরা জমিতে অতিরিক্ত সার ব্যবহার এবং রবি মৌসুমের জন্য আগাম সার সংগ্রহ না করলে কোন সংকট থাকবে না। তবুও সংকট মোকাবেলায় আরো ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সার বরাদ্দের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলায় সারের সংকট নেই, পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কোন ডিলার বা খুচরা বিক্রেতা সারের মূল্য বেশি নেয়ার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসএম