দস্তা সার কারখানা

যশোরে কৃষি কর্মকর্তার অভিযানে দিশেহারা অবৈধ কারবারীরা

যশোর প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ০৫:৪১ পিএম
যশোরে কৃষি কর্মকর্তার অভিযানে দিশেহারা অবৈধ কারবারীরা

যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অব্যাহত অভিযানে ৪নং নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ভেজাল দস্তা সার কারবারীরা ধরাশ্যায়ী। রোববার ৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনসহ একটি টিম নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সাহাপুর আড়পাড়ায় গড়ে ওঠা সুফলা এগ্রো কেমিক্যাল, আজিজুল ইসলামের ও পিকুলের ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন কারখানায় হানা দেয়। কৃষি কর্মকর্তার অভিযানের খবর পেয়ে কার খানার আশপাশে থাকা ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনকারী মালিক ও শ্রমিকেরা দ্রুত সটকে পড়ে। যার ফলে ভেজাল দস্তা সার কারবারী কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে দু’টি ভেজাল দস্তা সার কারখানার দরজা, জানালা খুলে নিয়ে সদর উপজেলার কৃষি অফিসে নিয়ে গেছে।

যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানাগেছে, রোববার ৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তিনিসহ একটি টিম সদর উপজেলার ৪নং নওয়াপাড়া ইউনিয়নের সাহাপুর আড়পাড়ায় অবস্থিত সুফলা এগ্রোকেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজে অভিযান চালান। উক্ত কারখানার দরজা বন্ধ থাকায় কারখানার মধ্যে ঢুকতে পারেনি। অথচ সুফলা এগ্রোকেমিক্যালের মালিক শহিদুল ইসলাম শহরের ঘোপ জেল রোডের নিজ বাসভবনের নীচে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করলেও অভিযানের খবরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে গা ঢাকা দেন।

ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন কারখানাটি তালা দিয়ে বন্ধ থাকায় প্রবেশ করতে পারেনি অভিযান টিম। এরপরও মাত্র কয়েশ’ অদূরে অবস্থিত পিকুলের ভেজাল দস্তাসার কারখানায় অভিযান চালায়। এসময় পিকুলের কারখানা থেকে দরজা ও জানালা খুলে নেন। এ সময় কারখানায় থাকা ভেজাল দস্তা তৈরি মালামাল জব্দ করেন। এরপর শাহাপুর আড়পাড়ার জুনায়েদ এর বাগানে অবস্থিত ঘুরুলিয়ার আজিজুল ইসলাম ও তরিকুলের কারখানায় অভিযান চালায়। কারখানাটি বন্ধ থাকলেও কারখানার দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ভেজাল দস্তা সারের কিছু নমুনা দেখতে পান।

কারখানায় কেউ না থাকার কারণে কারখানার দরজা খুলে নিয়ে আসেন। এর আগে গত ২৭ আগস্ট জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের একটি চৌকস টিম সাহাপুর আড়পাড়ায় অবস্থিত পিকুলের ভেজাল দস্তা সার কারখানায় অভিযান চালিয়ে ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মিক্সার মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ তালিকা করে নিয়ে আসেন। এরপরও পিকুল পুনরায় ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন মেশিন ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছিল।

অপরদিকে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের একটি টিম গত ১ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার ঘুরুলিয়া হাটখোলা বাজারে রাজু আহমেদ এর এ এগ্রো কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্টিজ প্রতিষ্ঠানে পুলিশ, র‌্যাব সমন্বয় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানীর মোড়ক ব্যবহার করায় এ আর এগ্রোকেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্টিজ এর মালিক রাজু আহমেদকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন। এ সময় রাজু আহমেদ এর ভেজাল দস্তা সার কারখানা থেকে উৎপাদিত কিছু সার পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করেন বলে কৃষি অফিস সূত্রে বলা হয়েছে।

সূত্রগুলো বলেছেন, এ আর এগ্রো কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক রাজু আহমেদ ও সুফলা এগ্রো কেমিক্যালের মালিক শহিদুল ইসলাম ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তা দাবি করেছেন। এরা দু’জন বড় মাপের ব্যবসায়ী। সারা বছর ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন করে কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এর আগে গত মাসের ২৩ আগস্ট কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনসহ একটি টিম সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের অন্যতম ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনকারী সামিউল ইসলাম ইমনের দস্তা সার কারখানায় অভিযান চালান।

সেখানে বিপুল পরিমানের ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনের নমুনা সংগ্রহ করেন। ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনের জন্য ইমনের পিতাকে হেফাজতে নেন। পরে তাকে ১লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করে তা আদায় করেন।

সূত্রগুলো আরো বলেছেন,সদর উপজেলার ঘুরুলিয়া  সাদ্দামের মোড়স্থ সুমি এগ্রো কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্টিজ বর্তমানে সাউদার্ন এগ্রো কেমিক্যালের মালিক আনোয়ার হোসেন লাল্টুর ভেজাল দস্তা সার কারখানায় অভিযান চালিয়ে কৃষি কর্মকর্তা তার ছেলে সিহাবকে আটক করেন। পরে সিহাবকে জেল জরিমানা দেন। ওই সময় লাল্টুর কারখানার মেশিন ও মালামাল কৃষি অফিসারের নেতৃত্বে একটি টিম খুলে সদর উপজেলা পরিষদে রেখে পরবর্তীতে নিলামে তুলেন। 

এছাড়া, লাল্টুর কারখানায় অভিযান চালানোর পর জুনায়েদ এর বাগানে আজিজুল ইসলামের কারখানায় অভিযান চালিয়ে কারখানা থেকে মেশিন ও মালামাল জব্দ করে নিয়ে যান। নিয়ে যাওয়ার পর আজিজুল ইসলাম পুনরায় মেশিন ও মালামাল ক্রয় করে পুনরায় ভেজাল দস্তা সার উৎপাদন করেন। 

সূত্রগুলো বলেছেন, আজিজুল ইসলাম অভিযানের খবর আগেভাগেই পেয়ে কারখানা থেকে মেশিন ও মালামাল খুলে তার বাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে অতি সাবধানে রেখেছে। যার ফলে রোববার ৪ সেপ্টেম্বর কৃষি অফিসার তার কারখানায় অভিযান চালিয়ে দুই মন খানে ভেজাল সার তৈরির উপকরণ দেখতে পান। যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদের অব্যাহত অভিযানের ফলে ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ভেজাল দস্তা সার উৎপাদনের স্থান সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের বেশ কয়েকটি ভেজাল দস্তা সার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর কৃষি অফিসের টনক নড়ে উঠেছে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছেন।

এসএম