সরকারি চাকরিকালে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ, অবসরকালে পরিশোধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০৪:৩৬ পিএম
সরকারি চাকরিকালে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ, অবসরকালে পরিশোধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সত্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন এমদাদুল হক (৬৫) নামে এক ব্যক্তি। এ পর্যন্ত যতদিন বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করেছেন তার হিসাব করে বকেয়া পরিশোধ করেছেন তিনি।

সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে মোট ২৫৩০ টাকা বকেয়া পরিশোধ করেন এমদাদুল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে এমদাদুল হক। কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিনি চাকরিজীবন থেকে অবসরে যান। ব্যক্তিগত জীবনে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক এমদাদুল। পরিবার নিয়ে বসবাস করেছেন জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে।

এমদাদুল হকের বড় ছেলে ইমরান বলেন, আমার বাবা সৎভাবে জীবন যাপন করেন। মানুষ মনে কষ্ট পায় এমন কাজ তিনি কখনো করেননি। কারও কাছে এক টাকা ঋণী থাকলেও খুঁজে বের করে তিনি পরিশোধ করেন।

তিনি বলেন, চাকরি জীবনের শেষ দিকে বাবা দুদকের হেড কোয়ার্টারে ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে তিনি ঢাকা যাতায়াত করেছেন। তখন বিভিন্ন কারণে অনেক সময় বাবা ট্রেনে টিকিট না কেটে আসা-যাওয়া করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি চাকরি জীবন থেকে অবসরে যান। কিন্তু জীবনে কতবার তিনি ট্রেনে টিকেট না কেটে ভ্রমণ করেছেন, সেই হিসাব তিনি গুনে রেখেছেন। সেই হিসাব অনুযায়ী তিনি সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী কবির হোসেন তালুকদার বলেন, সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্টেশন কাউন্টারে এক ব্যক্তি আসেন। তিনি জানান- ‘আগে বিভিন্ন সময়ে টিকিট না কেটে তিনি ভ্রমণ করেছিলেন এবং তার কাছে হিসাব আছে যে কতবার টিকিট না কেটে ভ্রমণ করেছেন। সে হিসাবে উনি ২৫৩০ টাকা টিকিট বা ভাড়া বাবদ রেলকে দিতে চাচ্ছেন।’ তখন স্টেশন বুকিং কাউন্টার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চট্টগ্রাম পর্যন্ত মহানগর প্রভাতীর ২৫৩০ টাকা সমমূল্যের আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করে দেওয়া হয়। পরে তাকে স্টেশন প্রধান বুকিং সহকারীর অফিসে বসিয়ে আপ্যায়ন এবং ধন্যবাদ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এমদাদুল হক নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়ে গেলেন যে রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা অন্যায়। তিনি সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। তার ট্রেন ভ্রমণে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।

এ বিষয়ে এমদাদুল হক বলেন, আমি যত পুণ্যই করি না কেন, এই দেনার দায় তো কোনো পুণ্য দিয়ে শোধ করার উপায় নেই। তাই সরাসরি রেলের খাতেই জমা দিয়ে দিলাম। জানি না তাতে আমার দায় মুক্তি হবে কি না। তবে অন্তত মানসিক প্রশান্তি পাব।

এসএম