গ্রাহকদের আমানতের দুই কোটি টাকা উধাও হয়েছেন আবদুস সাত্তার নামে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স লি. এক কর্মকর্তা। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এগারোগ্রাম বাজার শাখার ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন।
আবদুস সাত্তার দেবিদ্বার উপজেলার মুগসাইর গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে। সোমবার গণমাধ্যম কর্মীরা অভিযুক্ত সাত্তার মিয়ার বাড়ি গেলে তার ঘর তালাবদ্ধ দেখতে পান।
সাত্তারের প্রতিবেশীরা জানায়, কিছুদিন আগে কাউকে কিছু না বলে ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সাত্তার। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে তার বাড়িতে লোকজন এসে তাকে খোঁজ করে।
মোগসাইর গ্রামের ভুক্তভোগী আবদুল কাদির, তাজুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত সাত্তার মিয়া আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেড নামে মোগসাইর এগারোগ্রাম বাজার শাখার এরিয়া ম্যানেজার ছিলেন। তিনি গ্রামের মানুষদের আর্থিক সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ, ফিক্সড ডিপোজিট ও ডিপিএস নামে টাকা সংগ্রহ করতেন। এভাবে দুই বছর গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে তার ফোন নম্বর বন্ধ পেয়ে বাড়ি এসে দেখি ঘর তালা। সে তাঁর পরিবার নিয়ে পালিয়ে গেছে। আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মুগসাইর-এগারো গ্রামের স্থানীয় লোকজন বলেন, সাত্তার আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স লি. কে এলাকায় ব্যাংক হিসেবে পরিচয় দিত। সাইনবোর্ডে ব্যাংকস শব্দটি উল্লেখ আছে। এটি প্রথমে জাফরগঞ্জ বাজার শাখা হিসেবে পরিচালিত হতো। পরে ওই শাখাটি এগারগ্রাম বাজারে স্থানান্তর করে নিয়ে আসে সাত্তার। গ্রাহকদের রসিদেও এগারগ্রাম বাজার শাখা হিসেবে সিল মারা হয়েছে। বর্তমানে সেটির মালিক সাত্তার পালিয়ে গেছে। তার সাথে কোন যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
একই গ্রামের বিধবা খোসনেয়ার বেগম বলেন, অধিক মুনাফার আশায় শেষ সম্বল জমানোর দুই লক্ষ টাকা আমানত রেখেছিলাম আজিজ কো-অপারেটিভ লি. এর এগারো গ্রাম বাজার শাখায়। জমানো টাকা হারিয়ে আমি পাগলপ্রায়। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সাত্তার আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমি আমার টাকাগুলো ফেরত চাই।
পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুগসাইর গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, পেনশনের দুই লাখ টাকা বিশ্বাস করে জমা রেখেছিলাম সাত্তারের কাছে। এভাবে প্রতারিত হবো বুঝতে পারিনি।’
এগারগ্রাম বাজারে ফার্মেসী ব্যবসায়ী আবদুল কাদির বলেন, দুই নামে দশ লাখ টাকা জমা রেখেছি তার কাছে। আমি ছাড়াও ‘গ্রামের সহজ-সরল মানুষ বিশ্বাস করে তার কাছে টাকা জমা রেখেছে। এখন মানুষকে নিঃস্ব করে প্রতারক সাত্তার পালিয়ে গেছে।
এগারগ্রামের শারমিন আক্তার বলেন, সাইনবোর্ডে ব্যাংক লেখা দেখে তিন লক্ষ টাকা আমানত রেখেছিলাম। সাত্তারকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এগারো গ্রাম বাজারে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স নামে একটি মাল্টিপারপাস ছিলো। গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে কো-অপারেটিভ ম্যানেজার সাত্তার।
এ বিষয়ে জানতে সাত্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। দেবিদ্বার উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স লি.এর সরকারিভাবে কোন নিবন্ধন নেই। তারা গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে আসছে অনেকদিন থেকে। সমবায় বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এগারো গ্রাম থেকে ১৫ জন গ্রাহক আমার কাছে এসেছেন। আমি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেছি। তার অফিস ও বাড়ি তালা দেখতে পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও ও জেলা সমবায় অফিসে জমা দিয়েছি। উপজেলা ও জেলা সমবায় অফিস প্রতারক সাত্তারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কেএস