বাল্য বিবাহ, মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সমাজের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ বিশেষ কিছু ব্যক্তি সচেতন হলে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৪ দিন ব্যাপী সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মশালার শেষ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহ উল আলম ভূইয়া এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাল্য বিবাহ "শব্দটা বাংলাদেশে একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কত প্রাণ অকালে ঝড়ে পড়ছে তার সঠিক হিসেব কি কেউ রাখছে? পিতামাতা শুধু একথাটাই ভাবেন, মেয়েটা কখন একটু বড় হবে? বিয়েটা দিতে পারলেই যেন বাঁচেন। একটি অসুস্থ প্রতিযোগীতার মতো চলছে ব্যাপারটি। সরকারীভাবে বহু সচেতনতা ও শাস্তির বিধান থাকলেও কে শুনে কার কথা। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নিজে সচেতন হওয়া, আর সেটাইতো হচ্ছে না। আইনের চোখ ফাঁকি দিতে বয়স বাড়িয়ে কোর্ট হতে এফিডেবিট করিয়ে নেন নয়তো কাবিনটাই বাদ দেন।অতীতের বাল্য বিবাহের সামাজিক কুপ্রথা আজও চলছে। এই কুপ্রথা থেকে আগামীর প্রজন্মকে রক্ষাকরতে সকলের সচেতনা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, বাল্যবিবাহ একটি জাতিকে রুগ্ন করে দেয়৷ করে দেয় মেধাশূণ্য। মেয়েটি শুধু নিজেই শারীরিক ঝুঁকিতে পড়ে না তার পরবর্তী প্রজন্মগুলোকেও ঝুঁকিতে ফেলে৷ বাল্য বিবাহ নামক এই দুরারোগ্য ব্যাধিটি সারাতে সামাজিক সচেতনতা সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে পারে৷ সচেতন সমাজ সৃষ্টি করতে পারে আলোকিত মানুষ ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত৷ তাই বাল্যবিবাহ রোধে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেনতা সৃষ্টি করে বাল্যবিবাহের সর্বনাশা পথ থেকে মেয়েদের মুক্তি করে কিশোরীদের আলোর পথ দেখাতে সমাজের প্রতিটি মানুষ অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে৷
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস.এম মিজানুর রহমান বলেন,মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাদকের সর্বাত্মক আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়েছে। মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী অঞ্চল মিয়ানমার, লাওস এবং থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবস্থিত। এসব দেশ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাদক পাচারের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রানজিট ব্যবহার করার কারণে মাদকের বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আশার কথা এই যে বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ও জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করেছেন এবং সব বাহিনী মাদক নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করছে। তবে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মানুষরা যদি আরও সচেতন হয় তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিতে আশা একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন,এই ধরনের প্রশিক্ষণ ইতিপূর্বে অনেক হয়েছে কিন্তু কোনো উপকারে আসেনি। বাল্য বিবাহে বাধা দিলে তারা কোর্টে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে আসে। এই কোর্ট ম্যারেজে স্থানীয় এডভোকেট সহ জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট এডভোকেটদের দায়ী করেন তারা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম,স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম, মুছাপুর ইউনিয়ন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মুছাপুর ইউনিয়নে ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড মহিলা মেম্বার আয়েশা আক্তার জেসি, চরফকিরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জায়দল হক কচি প্রমুখ।
এসএম