আগামী ১৮ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনীত হয়েছেন মো. মহিউদ্দিন।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন যাবৎ মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান প্রশাসক ও গেল দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এই পদে এবারও আলহাজ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার আশা করছে তার সমর্থকরা।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে ধীর গতি। নির্বাচনকে ঘিরে এখানো প্রার্থীদের মাঝে প্রকাশ্যে উৎসব আমেজ না থাকলেও চলছে নানা রকম মের“করণ। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবেই প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছে।
মাঠে ময়দানে চায়ের দোকানে চলছে নির্বাচনের নানা গুঞ্জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক রকমের আলোচনা এবং প্রার্থীরা নিজেদের জানান দিতে নানা রকমের কৌশলী পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ নির্বাচনের ভোটার শুধু জনপ্রতিনিধিরা। তাই আমজনতা নিয়ে প্রার্থীদের ভাবনা কম। জনপ্রতিনিধিদের মন জয়ে নানা তৎপরতা চলছে। তবে এর চেয়ে বেশি দৌড়ঝাঁপ চলছে প্রভাবশালীদের সমর্থন পেতে।
আবার অনেকে জনপ্রতিনিধিদের ভোট ব্যাংক নিয়ে দর কষাকষি শুরু করে দিয়েছেন। বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি নিয়েও আলোচনা আছে চায়ের টেবিলে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে- গত নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ হবে অন্যরকম। অনেক ধরনা পাল্টাবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। প্রতি উপজেলা তথা প্রতিটি সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদেই জমজমাট লড়াই হবে। তাই সদস্য পদে গেল বারের অনেকের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলাকে সংরক্ষিত সদস্যদেরকে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এখানে নির্বাচনে সংরক্ষিত সদস্যদেরকে তিনটি উপজেলার ভোটারের কাছে ভোট প্রার্থনার জন্য যেতে হবে। আর সাধারণ সদস্যদেরকে প্রতিটি উপজেলার একটিতে নির্বাচনের সময়ে ভোট প্রার্থনায় থাকতে হবে। সেই হিসাবে সংরক্ষিত সদস্যদের ভোটের এরিয়া হচ্ছে প্রথমতো সিরাজদিখান, শ্রীনগর ও লৌহজং। আর দ্বিতীয়তো হচ্ছে টঙ্গীবাড়ি, মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া।
আর ছয় উপজেলায় ৬ সদস্য পদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। আর ২ সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৩ প্রার্থী।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে রয়েছেন- মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আসনে আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আমান উল্লাহ প্রধান শাহিন, জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. সামসুল কবির মাস্টার ও চরকেওয়ার আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক। গজারিয়া উপজেলা আসনে মো. সাইদুর রহমান। টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি মানিক মিয়া ও আতিকুর রহমান। লৌহজং উপজেলায় মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী ও মোহাম্মদ আলমগীর কবীর। সিরাজদিখান উপজেলায় মোহাম্মদ মান্নান হাওলাদার, আলী আহাম্মদ, এসএম আলমগীর ও এইচ এম সাইফুল ইসলাম। সংরক্ষিত সদস্য হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন অ্যাডভোকেট সালমা বেগম, মোরশেদা বেগম লিপি ও শিউলী বেগম।
এ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জের ২টি পৌরসভা ও ৬৮ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষ ভোটে একজন চেয়ারম্যান, ৬টি উপজেলা থেকে ৬ জন সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ২ জনকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারবেন।
নির্বাচনে জেলায় মোট ভোটার ৯২২ জনপ্রতিনিধি। এ নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জের জেলার ২টি পৌরসভা ও ৬৮ ইউনিয়নের সকল জনপ্রতিনিধি প্রত্যক্ষ ভোটে জেলা পরিষদের এই চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচন করবেন।
জানা যায়, সিরাজদিখান উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ১৮৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ১৪১ জন ও নারী ভোটার হচ্ছে ৪৪ জন। শ্রীনগর উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ১৮৩ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ১৪০ জন ও নারী ভোটার হচ্ছে ৪৩ জন। লৌহজং উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ১৩৩ জন। পুরুষ ভোটার ১০২ জন ও নারী ভোটার হচ্ছে ৩১জন। টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ১৭১ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ১৩১ জন ও নারী ভোটার হচ্ছে ৪০ জন। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ১৪৪ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ১০৯ জন ও নারী ভোটার হচ্ছে ৩৫ জন। গজারিয়া উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ১০৬ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ৮১ জন ও নারী ভোটার হচ্ছে ২৫ জন। সেই হিসেবে জেলায় মোট ৯২২ ভোটারের মধ্যে পুরুষ জনপ্রতিনিধি ৭০৪ ও নারী জনপ্রতিনিধি ২১৮।
মুন্সীগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ আমার সংবাদকে জানান, ১৭ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জ জেলায় নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। সেই হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ হচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বর।