বেহাল সড়ক, জনদুর্ভোগ চরমে

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২, ০৩:০১ পিএম
বেহাল সড়ক, জনদুর্ভোগ চরমে

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মহাযজ্ঞ হিসেবে পরিচিত একটি অন্যতম উপজেলা হচ্ছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া। এ উপজেলায় সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, তৃতীয় গভীর সমুদ্র বন্দর পায়রা পোর্ট, ১৩২০ মেঘাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিক্স লেন ও ফোরলেনসহ বিভিন্ন মেঘা প্রজেক্ট রয়েছে। যে উপজেলায় বহিছে এতসব উন্নয়নের জোয়ার সেখানকার একটি ইউনিয়নে ৬০ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৬ কিলোমিটার পাঁকা সড়ক যা এখনকার সময়ের পেক্ষাপটে অত্যান্ত দুঃখজনক। আবার সেই ৬ কি.মি সড়কের ১ কিলোমিটার পাঁকা সড়কের মধ্যে ৬ থেকে ৭ স্থানে রয়েছে ভাঙ্গা। এ ভাঙ্গা সড়কে যেকোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছে স্থানীয়রা। উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নে এ চিত্র ফুটে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত চম্পাপুর ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট পাঁকা করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ধানখালী হতে চম্পাপুর ইউনিয়নে যাতায়তের জন্য মাত্র একটি পাঁকা সড়ক রয়েছে। কলেজ বাজার হতে অস্থায়ী ইউনয়ন পরিষদ পর্যন্ত মাত্র ৬ কিলোমিটার পাঁকা সড়ক। এ সড়কটি চম্পাপুর ইউনিয়নের উপজেলা কানেকটিং সড়ক নামে পরিচিত। চম্পাপুর ইউনিয়নে মোট ৬০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে যার মধ্যে উপজেলা কানেকটিং সড়ক নামের এ সড়কটির মাত্র ৬ কিলোমিটার পাঁকা হয়েছে। এই ৬ কিলোমিটার পাঁকা সড়কের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ৬ থেকে ৭ স্থানে ভাঙ্গা রয়েছে। ২০১১ সালে বৃহত্তর ধানখালী ইউনিয়ন ভেঙ্গে চম্পাপুর নামে নতুন একটি ইউনিয়নের আত্মপ্রকাশ হয়।

এ ইউনিয়নের ১২ টি গ্রামে মোট ৩০ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। এখানে ১২ টি প্রাইমারী, ২ টি বেসরকারী, ৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১ টি দাখিল মাদ্রাসাসহ একমালিকানাধীন ছোট ছোট একাধিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। যেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত অধ্যায়ন করে আসছে। বিশাল এ জনবসতিপূর্ণ ইউনিয়নের ৬০ কি.মি সড়কের ৫৪ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা রয়েছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষাকালে ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয়দের ভোগান্তি চরমে উঠে। ব্যবসায়ীক জিনিস-পত্র আনতে ভোগান্তী পোহাতে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় বাসীন্দাদের দাবি, ধানখালী মডেল বিদ্যালয় থেকে আলামিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হয়ে পাটুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত সড়কটি পাঁকা হলে এখানকার ৬ থেকে ৭ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যান্ত অসহায় অবস্থায় রয়েছে বলে জানান।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরু হাওলাদার, আলতাফ গাজীসহ আরো অনেকে বলেন, আমাদের চম্পাপুর ইউনিয়নটি দীর্ঘদিন যাবৎ অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। দেশে এতো উন্নয়ন হচ্ছে অথচ আমাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে আমরা এ ভোগান্তি করে যাচ্ছি। এখনকার সময়ে একটি ইউনিয়নে মাত্র ৬ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তা রয়েছে যা কল্পনাও করা যায় না। আশা করছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, দেশের উন্নয়নের কান্ডারী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ইউনিয়নের প্রতি তার উন্নয়নের ছোয়া ছড়িয়ে দিবেন।

স্থানীয় দোকানদার নুরুল ইসলাম বলেন, রাস্তার যে অবস্থা তাতে উপজেলা সদর হতে মালামাল আনতে হিমশিম খেতে হয়। যে রাস্তাটুকু পাঁকা রয়েছে তা ভেঙে নাজেহাল অবস্থা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। রাস্তা মেরামত ও কাঁচা রাস্তা পাঁকা করার জন্য তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বাচ্চু মোল্লা বলেন, কলাপাড়া উপজেলার মধ্যে এ ইউনিয়নটি দীর্ঘ বছর ধরে অত্যান্ত অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। ইউনিয়নের ৬০ কি.মি সড়কের মাত্র ৬ কিলোমিটার সড়ক পাঁকা করা হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে সে সড়কও এখন নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে। অতিসত্তর ভেড়িবাঁধ মেরামতসহ ভাঙ্গা সড়ক পাঁকাকরন ও ইউনিয়নের নির্দিষ্ট কিছু কাঁচা রাস্তা পাকা করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চম্পাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার বলেন, উপজেলা সদর হতে অনেক দুরত্ব ও দূর্গম এলাকায় হওয়ায় একমাত্র চম্পাপুর ইউনিয়নটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রয়েছে। এ উপজেলায় বিভিন্ন মেঘা প্রযেক্টের কাজ চলমান থাকলেও কোন ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া এ ইউনিয়নকে স্পর্শ করেনি। উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে এ বিষয়ে আমি আলোচনা করে আসছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষ অতিসত্তর এ ইউনিয়নটির প্রতি সু-দৃষ্টি দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোহর আলী বলেন, অর্থনৈতিক স্বল্পতা থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক কাজ করা সম্ভব হয় না। ঐ ইউনিয়নের পাঁকা সড়কটি সংষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। আরো কিছু সড়ক পাঁকা করনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

কেএস