নান্দাইল হাসপাতালে সেবা গ্রহীতাদের টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার চুরি

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২, ০৩:৪০ পিএম
নান্দাইল হাসপাতালে সেবা গ্রহীতাদের টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার চুরি

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে দিনদুপুরে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের (নারী-পুরুষের) টাকা-পয়সা সহ স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোর চক্র। বেশ কিছু দিন যাবত এ চোর চক্রটি গ্রাহকদের অজান্তেই হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ-সম্পদ। প্রতিদিনই হাসপাতালের আউটডোরে টিকেট এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন তথা সেবা গ্রহিতাদের সাথে মিশে গিয়ে চুরি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া হাসপাতালের ইনডোরে থাকা রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে থাকা টাকা-পয়সার চুরি করে নিচ্ছে এ চক্রটি। সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষের টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ায় কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে, আবার কেউ কেউ উক্ত হাসপাতালের সেবা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

রোববার (২রা অক্টোবর) সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রোগের চিকিৎসার জন্য যে কয়েক টাকা জমিয়েছিল তাও চুরি করে নিয়ে যাওয়া চিকিৎসা করাতে না পেরে হাসপাতালের সামনেই কাদঁলেন বিধবা মহিলা রহিমা খাতুন। রহিমা খাতুনের বাড়ি চন্ডিপাশা ইউনয়িনের মৃত হাফিজ উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি তাঁর হাতের এক্সরে করাতে কষ্ট করে ৫০০ টাকা যোগাড় করেছিলেন।

এছাড়া গাংগাইল ইউনিয়নের মধ্যগয়েশপুর গ্রামের মতির মিয়ার স্ত্রী করোনা আক্তার তাঁর মেয়ের চিকিৎসা সেবা নিতে এসে টিকেটের জন্য লাইনে দাড়িঁয়েই ১৪শত টাকা চুরি হয়ে গেছে। কে বা কারা চুরি করেছে তিনি তা বলতে পারছেন না। শুধু তাই নয় একই দিন মধ্যাহ্ন ভোজের সময় সেবা নিতে আসা অজ্ঞাত আরো ২ নারীর নগদ ৩ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে চোর চক্রটি।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা গ্রহিতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষ। যে কোন সময় হাসপাতালে সিন্ডিকেট চোর চক্রের খপ্পরের শিকার হচ্ছেন তারা।

নান্দাইল উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ইনডোরে রোগীদের কয়েকটি ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরা থাকালেও আউটডোরের একটি মাত্র সিসি ক্যামরা রয়েছে। যা অস্বচ্ছল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে আউটডোরের সিসি ক্যামেরাটি কেন অস্বচ্ছল তা নিয়েও জনমনে নানান প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থার জন্য সেবা গ্রহিতারা দায়ী করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কারণ আগে এরকম চুরি-ছিনতাই ছিলনা। হঠাৎই কেন হাসপাতালে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হাসপাতালে চুরির ঘটনা নিয়ে সুশীল সমাজের ব্যক্তিগণ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। গত কয়েকদিন আগে হাসপাতালের সাধারন জনগণের জন্য দেওয়া সিলিং ফ্যান সরিয়ে সেবা প্রদানকারীর মাথার উপর সিলিং ফ্যান ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছনতা সহ এ ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এদিকে প্রতি মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন বৃদ্ধি পেলেও রোগীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই নাজুক।

এ ব্যাপারে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশীদ জানান, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, সাধারণ মানুষ যেন সঠিক চিকিৎসা সেবা পায়। আর হাসপাতাল মনিটরিংয়ের জন্য লাগানো সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে টেকনিয়াশান ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটু ব্যাঘাত করছে। পাশাপাশি হাসপাতালে জনবল সংকট থাকা এটাও একটা অন্যতম কারন হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া আমি নিজে আউটডোর ও ইনডোর পরিদর্শন করে রোগী ও রোগীর সাথে থাকা স্বজনদের সর্বদা সচেতন করি। আশা করছি খুব শীঘ্রই টেকনেশিয়ান ত্রুটি দূর হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।