• রোগীদের খাবারের জন্য রান্নাকরা ঘরে বিড়ালের বসতি
• রান্না ঘরে বিড়ালের আবাসিক স্থান
• অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয় খাবার
• রান্না করা খাবার বিড়ালে খাওয়ার পর জোটে রোগীর ভাগ্যে
• বিড়ালের অবয় চলাচল ও আবাসন ব্যবস্থা হাসপাতালের রান্না ঘরে
• পরিচ্ছন্নকর্মীরা নিজ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে অন্য কাজে লিপ্ত
• পরিষ্কার নেই হাসপাতালের টয়লেট, রোগীদের ময়লা ফেলার বোল
বরিশাল সদরের অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র হলেন সদর জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালটির বয়স এখন ১১০ বছর। ১৯১২ সালে ২০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এরপর নব্বই দশকে ৮০ শয্যা এবং পরে ডায়রিয়ার ২০ শয্যা নিয়ে একশ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়। তবে বর্তমান সরকারের আমলে কিছু দিন আগে একশ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শয্যা করার অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলছে ভবন নির্মাণ কাজ। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের গরীব অসহায় মানুষসহ ৫ লাখ বাসিন্দা ও সদরের অধিকাংশ মানুষই সাধারণ চিকিৎসা নিতে ছুটে আসেন সরকারি এই সদর জেনারেল হাসপাতালটিতে।
এখানে ৭টি আবাসিক ওয়ার্ড, ১টি জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫০০ মতো রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন যেখানে এতো রোগীর চাপ সেখানে অপরিষ্কার আর অপরিচ্ছন্নতায় ভরা পুরো হাসপাতালটি। এ ছাড়াও হাসপাতালের ওয়ার্ডের মধ্যে ছাগল ও বিড়াল থাকে রোগীদের সঙ্গে।
রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও নার্স কাছাকাছি থাকলেও চরম সংকট ও অব্যবস্থাপনায় রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। পরিচ্ছন্নকর্মীরা নিজ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজে সাথে লিপ্ত রয়েছে। আর যাও রয়েছে তাদের দ্বারা হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নর কোন বালাই নেই।
অপর দিকে বিড়ালের অবয় চলাচল ও আবাসন ব্যবস্থা হাসপাতালের রান্না ঘরে। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে রোগীদের খাবার। পরিষ্কার নেই হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড, টয়লেট, রোগীদের ময়লা ফেলার বোলসহ আশপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থার পরিবেশ।
আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। ৫ জনের কাজ চালাতে হচ্ছে এক জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে। তাই নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হিসেব অনুযায়ী হাসপাতালে ২৫ জন চিকিৎসক ও ১৭০ জনের মতো নার্স (সেবিকা) রয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী হাসপাতালটিতে পরিচ্ছন্ন কর্মীর পর্যাপ্ত পরিমাণ অভাব রয়েছে। এখানে ১৭ জন সরাসরি রাজস্ব বিভাগ আর ১০ জন সরকার নির্ধারিত দেয়া প্রতিদিন হিসেবে বেতনে চাকরি করেন। কিন্তু ৪র্থ শ্রেণি পদে চাকরি নিয়ে ২ জন করছেন পরিসংখ্যান বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। বাকিরা দায়সারা কাজ করেন। ফলে হাসপাতালটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকে শূন্যের কোঠায়। প্রতিদিন ২ বার হাসপাতালের মেঝে মুছার কথা থাকলে শুধু মাত্র ১ বার ঝাড়ু দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ড মাস্টার নুর হোসেন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে না চাইলেও হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে অন্যরকম একটি চিত্র। রান্না ঘরে বিড়ালের আবাসিক স্থান। কখনো কখনো রান্না করা ভাত আর তরকারি বিড়ালে খাওয়ার পর জোটে রোগীর ভাগ্যে। আবার রান্না ঘর থেকে খেয়ে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর বেডে ঘুমিয়ে পড়ে বিড়াল গুলো। বিষয়টি ওয়ার্ড মাস্টার নুর হোসেনকে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করেন কর্মরত সেবিকারা। আর চারপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা।
এছাড়াও রোগীদের ময়লা ফেলার পাত্রটি ধোয়া হয়নি কোন দিনেও। ফলে অপরিষ্কারে ভরা হাসপাতালের টয়লেটও। সাধারণ রোগীরা পরিচ্ছন্নকর্মী ও ওয়ার্ড মাস্টারের আইনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখানে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানালের তীব্র ক্ষোভের কথা।
এবিষয় গুলো নিয়ে হাসপাতালের আরএমও ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের হাসপাতালে বেশ কয়েক বছর ধরে জনবল সংকট রয়েছে। বেশ কয়েক জনবল সংকটের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয় এখানে কর্মরত ডাক্তারদেরও নিজেদের রুম নিজেদের ঝাড়ু দিয়ে বসতে হয়। নেই কোন অফিস সহকারী। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
রোগী সেবার সঠিক ইচ্ছা আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকিতে হয়ে উঠবে সঠিক মানবসেবা প্রতিষ্ঠান। এমনটি প্রত্যাশা বরিশালবাসীর।
এসএম